রাজশাহী

রাজশাহী অঞ্চলে বোরোর বাম্পার ফলন দামে খুশি কৃষক

  প্রতিনিধি ৮ মে ২০২৩ , ৮:৪৯:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

রফিকুল হাসান ফিরোজ, রাজশাহী ব্যুরো :

কৃষকের সোনালী ধান দোল খাচ্ছে মাঠজুড়ে। ধান পাকতে শুরু করায় কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক ও শ্রমিক। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক। বিগত বছরের তুলনায় এবার ধানের দামও ভালো পাওয়ায় কৃষকের মলিন মুখে ফুঠেছে হাসি। বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিকূলতা কাটিয়ে সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এদিকে, রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশার কথাও বলছে কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল শনিবার জেলার পবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ও বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকদের উৎপাদিত ধান মাড়াইয়ের পর শুকাতে ও বাজারে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তাছাড়া সরাসরি কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছেন ১২শ টাকা মণ দরে। গোদাগাড়ী উপজেলার রাজবাড়ী হাট ও পবা উপজেলার দামকুড়া নওহাটা হাটে ২৮ ধান সাড়ে ১২শ টাকা মণ দরে এবং জিরা সাইল ১৩শ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের (রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ) ৪টি জেলায় মোট ৩ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা করা হয়েছে। বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে সাড়ে ১২শ টাকা।
অন্যদিকে সরাসরি কৃষকদের কাছে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। কৃষকদের মাঝে লটারির মাধ্যমে বাছাই করা হয় কৃষক। কৃষকরা সরকারি খাদ্য গুদামে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ১২শ টাকা মণ দরে। সরেজমিনে পবা উপজেলার পারিলা, দামকুড়া, বড়গাছী ও হুজুরিপাড়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, রোদের আলোয় ঝলমল করছে মাঠজুড়ে কৃষকের সোনালী বোরো ধান। বেশির ভাগ ধান পাকতে শুরু করেছে। আবার কিছু ধান কাচাও রয়েছে। আবার মাঠে ধান কাটাও শুরু করে দিয়েছে কৃষক। মাঠে মাঠে বোরো ধান কাটার যেন আনন্দ উৎসব শুরু হয়ে গেছে কৃষকদের মাঝে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে টানা এভাবে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করবেন কৃষক পরিবার।

 

গোদাগাড়ী উপজেলার রাজবাড়ী বøক বিজয়নগর এলাকায় কৃষক আরিফ হোসেন জানান, এ বছর ১৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলাম। বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছি ২০ মণ ধান এবং খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় ধানের দাম ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখেছি। পবার পারিলা ইউনিয়নের কৃষক সিহাব উদ্দিন জানান, আল্লাহর রহমতে বৃষ্টি ও আবহাওয়া ভাল হওয়ায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান পাকতে শুরু করেছে। আমরা অনেকেই কাটতে শুরু করেছি। সব জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় শ্রমিকের মজুরিও বেশি। তাই নিজে ও ছেলেদের নিয়ে ধান কাটতে শুরু করেছি। না পারলে শ্রমিক নিবো। এবার এমন ফসলে সত্যিই আমরা খুশি। পবা উপজেলার বড়গাছী এলাকার কৃষক সাহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর বোরো ধান করে ফলন যেমন ভালো পেয়েছি বাজারে দামও ভালো পাচ্ছি। আমি গেল দু-তিন বছর ধরে দাম ভালো না পাওয়ার কারণে ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছি। তবে এভাবে যদি দাম ভালো পাই ধানের তাহলে কৃষকরা বাচঁবো। পবা উপজেলার দর্শনপাড়া এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, ধান কেটেছি এখন মাড়াই করছি। পাশাপাশি বাজারেও বিক্রি করছি। দাম ভালো পাচ্ছি। যদি দাম না কমে তাহলে আমরা কৃষকরা লাভবান হবো এ বছর। গত বছরের চেয়ে এবার ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধান পাকতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত ১৫ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন।

 

তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। অনেক কৃষক ধান কাটতেও শুরু করে দিয়েছে। এ বছর কৃষকরা তাদের ঘরে বাম্পার ফলন তুলবেন। চলতি বছর ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। বোরো ধানের রোগবালাই অনেকাংশে কম থাকায় বাম্পার ফলনে আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাজারে ধানের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা ধানের ফলন যেমন ভালো পেয়েছে তেমনি গতবারের চেয়ে এ বছর দাম ভাল পাচ্ছে। বাজারে প্রতি মণ ধান তারা সাড়ে ১ হাজার থেকে সাড়ে ১২শ টাকা এবং সরকারের কাছে ১২শ টাকা দরে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছে কৃষকরা। নওহাটা খাদ্য গোডাউনের কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনছে। গত বছর প্রতি কেজি ২৭ টাকা মূল্যে এক মণ ধান এক হাজার ৮০ টাকা দামে কেনা হয়েছে। এই বছর কৃষকরা সরকারি খাদ্য গুদামে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ১২শ টাকা দরে। এখন বাজারে নতুন বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে কিন্তু মজুদ অনেক কম। গোডাউনের তুলনায় বাজারে ধানের দাম কিছুটা বেশি হলেও বাজারে বোরো ধানের মজুদ বৃদ্ধির সাথে সাথে দাম কমতে পারে। কিন্তু গোডাউনের দাম অপরিবর্তিত থাকবে।

আরও খবর

Sponsered content