প্রতিনিধি ৪ আগস্ট ২০২৪ , ৪:০৯:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ
একই সময়ে একইস্থানে কোটা আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচীকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে গেছে চট্টগ্রাম। পুলিশ, আওয়ামী লীগ এবং কোটা আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে পুরো চট্টগ্রাম নগরী। সংঘর্ষে ইতোমধ্যে ৫০জনের বেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের ভীড় বাড়ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
জানা গেছে, আগের দিন শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী, সিটি মেয়রের বাড়ীতে এবং মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপি’র অফিসে ভাংচুর, হামলা অগ্নিসংযোগের কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত, সাবেক মন্ত্রী মীর নাছির এবং নগর বিএনপি’র আহবায়ক এরশাদ উল্ল্যাহর বাড়ীতে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। রাতের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে রোববারের কর্মসূচীতে।
রোববার সকাল ১১টার দিকে নিউমার্কেট চত্ত্বরে অবস্থান নেয় কোটা আন্দোলনকারীরা। এসময় শুরুতে সিটি কলেজ প্রান্ত থেকে ছাত্রলীগ যুবলীগের একদল নেতাকর্মী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থানকারী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। এসময় পুলিশ টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেট, রাবার বুলেট, লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের সাথে এসময় আন্দোলকারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ এবং সরকারী দলের ওপেন অস্ত্রহাতে আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে। ধাওয়া খেয়ে তারা কদমতলী টাইগারপাসমুখী দৌড়াতে থাকে। এসময় সরকারী দলের নেতাকর্মীদের হাতে এবং পুলিশের গুলিতে প্রায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ এবং সরকার দলীয় আক্রমণের কাছে টিকতে না পেরে আন্দোলনকারীরা টাইগারপাস, ওয়াসা মোড় এবং লালদীঘি এলাকায় অবস্থান নেন। অপরদিকে নিউ মার্কেট মোড় দখলে নিয়ে সেখানে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেন। সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলেও নিউমার্কেটের আশেপাশে ছিল না পুলিশ। তারা এ সময় সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সরকারি সিটি কলেজের সামনে ককটেল বিষ্ফোরণ এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে আতঙ্ক তৈরী করে। হঠাৎ করেই বেলা সাড়ে ১১টার পর পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ছোঁড়ে। সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট চত্ত্বর থেকে আশেপাশে ছোটাছুটি করতে থাকে।
তবে এর মিনিট দশেক পরেই শিক্ষার্থীরা আবারও নিউমার্কেট চত্বরে জড়ো হয় এবং বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। তখন ফের পুলিশ টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেন্ডে নিক্ষেপ করে। এসময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে যোগ দেয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাও। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজও শোনা গেছে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট সড়ক ছেড়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায়। এরপরেই সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা নিউমার্কেট চত্ত্বরে অবস্থান নেন। এরপরেই পুলিশ সেখান থেকে সরে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মোঃ তারেক আজিজ জানিয়েছেন, যেকোন সংঘাত এড়ানোর জন্য নগর পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় কোনো হুমকি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিউমার্কেট এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা প্রায় ৩০/৪০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
বর্তমানে নিউমার্কেট, রাইফেল ক্লাব, স্টেশন রোড এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংঘর্ষের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আন্দোলনকারীদের একটি অংশ লালদিঘীতে জমায়েত হয়েছে। আরেক অংশ অবস্থান নিয়েছে টাইগারপাস-স্টেশন রোডে। এদিকে আন্দোলনকারী এবং সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম আদালত ভবনেও তার রেশ পড়ে। একপর্যায়ে সরকারপন্থী আইনজীবীদের হাতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা লাঞ্চিত হন।