প্রতিনিধি ২১ অক্টোবর ২০২৪ , ৭:৩১:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ
সংস্কার যেন উপসংহারহীন না হয়ে পড়ে, সংস্কারের তো একটা উপসংহার টানতে হবে সেটা যদি অনন্তকাল ধরে হয় তখন তো প্রশ্ন দেখা দিবে। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কমিটমেন্ট হল দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আর সেটা করতে হলে তো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, যেটা থেকে ১৫ বছর দেশের জনগণ বঞ্চিত ছিল সেটা তো নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার দুপুরে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এমআইএসটির শিক্ষার্থী শহিদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন ও কলেজ শিক্ষার্থী শহিদ নাফিসা হোসেন মারওয়ার পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ ও আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, এই যে এখন আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি আগে সেটিও সম্ভব ছিল না, কোথায় কথা বলতে গেলে পুলিশ এসে ছত্রভঙ্গ করে আমাদের আটক করে নিয়ে যেত। এই যে একটা মুক্তির সুবাতাসের মধ্যে আমরা রয়েছি এর পিছনে যাদের অবদান আমরা বিএনপি পরিবার তাদের পাশে দাড়াচ্ছি। বৃহত্তম রাজনৈতিক দল যারা গত ১৬ বছর যাবত লড়াই করে চলেছে তারাই তো এই চূড়ান্ত আন্দোলনের পটভূমি রচনা করে দিয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশরত্ন তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা দেশের প্রত্যেকটা জায়গায় যাচ্ছি যেখানে যেখানে নিহত ও আহতরা রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেক শিশু, ছাত্র, মহিলা এমনকি সাংবাদিকও আছেন। আমরা বিএনপি পরিবার সারাদেশেই যাচ্ছি এবং দেশ নায়ক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাঁদের খোঁজ নিচ্ছি।
এই বিএনপি নেতা আরো বলেন, এখনো ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের দোসররা তাদের কালো টাকা ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। গতকাল তারাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অস্ত্র নিয়ে গোলাগুলি করেছে। এইযে জনঅরণ্যের মাঝে তারা লুকিয়ে রয়েছে এবং বের হয়ে দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। এজন্য আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বারবার চাপ দিয়েছি, যে আপনাদের কোন ব্যর্থতার জন্য যদি দেশে ফ্যাসিবাদের পুনর্জীবন ঘটে এর দায় আপনাদের সবার থাকবে। এত যে রক্তদান, এত মানুষ যে শহীদ হলো সেটি তাদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই আপনারা কেন এখনো বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছেন না। কেন আপনারা সেইসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দেশে শান্তি ও সুশৃংখলতা ফিরিয়ে আনতে পারছেন না। গণতন্ত্রকামী সকল দল তো আপনাদেরকে সমর্থন করেছে এবং আমরা প্রতি মুহূর্তে আন্দোলন করছি। পাশাপাশি আমরা এও বলেছি দেশের মানুষ না খেয়ে থাকে এই পরিবেশ যেন তৈরি না হয়। দেশের মানুষ যেন দুমুঠো খেয়ে বাঁচতে পারে সেজন্য বাজার সিন্ডিকেট, মার্কেট সিন্ডিকেট যারা এতদিন ধরে করে রেখেছে তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসেন। আমরা এ ব্যাপারে অল্পকিছু ড্রাইভ দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ব্যাপক আকারে কোন ড্রাইভ দেখতে পাচ্ছিনা।
রিজভী আরো বলেন, গণতন্ত্র মানে মানুষ যেন শান্তি মতো বসবাস করতে পারে এবং গলা খুলে সমালোচনা করতে পারে, কথা বলতে পারে। দেশে আইনের শাসন থাকবে কে কোন দল করে এটা বড় কথা নয়, যেই অপরাধী পুলিশ তাকে ধরবে এবং বিচারের আওতায় আনবে এটাই তো ডেমোক্রেসি, ডেমোক্রেসি মানে তো শুধু নির্বাচন না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের একটা বড় উপাদান তবে সেখানেও আমরা একটু জটিলতা দেখছি বিভিন্ন ধরনের আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আসার কথা শুনছি। কিন্তু না আপনারা একটি অবাধ্য সুষ্ঠ পরিবেশ নিয়ে আসুন যাতে করে জনগণ ১৫ বছর যাবত যারা ভোট দিতে পারেনি তারা যেন নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। আর এটাই হলো প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ এই পরিবেশ সৃষ্টি করাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব। যদি আমরা সেটা নিশ্চিত না করতে পারি তাহলে এত হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ বৃথা হয়ে যাবে। দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্রের পুনরুত্থান ঘটাতে হবে, সেটা চর্চা করতে হবে এবং রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সেটার বিকাশ ঘটাতে হবে।
সেই লক্ষ্যেই তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা বিএনপি পরিবার যারা এই আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী দোসরদের গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছি যাতে তারা হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে যায়।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আবু আশফাক, সাভার থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি, ঢাকা জেলা বিএনপির সহ সভাপতি খন্দকার শাহ মাইনুল হোসেন ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলমসহ স্থানীয় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী।