ময়মনসিংহ

সরিষাবাড়ীতে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদ

  প্রতিনিধি ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৬:৫৭:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

সরিষাবাড়ীতে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদ

জামালপুরের সরিষাবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে প্রাণহানি। লেভেল ক্রসিংগুলোতে নেই কোনো গেটম্যান। রেল সংশ্লিষ্টরা দায় এড়াতে কোনো কোনো ক্রসিংয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগালেও তা আর চোখে পড়ে না। রেলের লাগানো অধিকাংশ সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক স্থানে নেই কোন সাইনবোর্ড। গেটম্যান বিহীন অরক্ষিত এইসব লেভেল ক্রসিং থেকে বাচঁতে সুরক্ষা চায় এলাকাবাসী।

সরিষাবাড়ী রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় যমুনা, অগ্নীবিনা ও জামালপুর এক্সপ্রেস নামে ৩টি আন্তঃনগর ও ৩টি লোকাল ট্রেন চলাচল করে। উপজেলায় রেলপথে কাগজ কলমে মোট ১৫টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৯টিতে গেটম্যান রয়েছে। বাকি ৬টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। নেই কোনো গেটম্যান। এই সব লেভেল ক্রসিংগুলোয় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। চলতি বছরের গত বুধবার ৬ নভেম্বর পৌরসভার সাতপোয়া স্বপ্ননীল পার্ক সংলগ্ন জামতলা মোড় এলাকায় অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ’জারা মনি’ নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। একই স্থানে ২০২২ সালের মে মাসে সরিষাবাড়ী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মিটার টেস্টিং সুপারভাইজার মো. আলী হাসান এবং একই অফিসের ইলেক্ট্রিশিয়ান সুলতান মাহমুদ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান।

এদিকে গত ২০২১ ফেব্রুয়ারি আওনা ইউনিয়নের চেঁচিয়াবাধা এলাকার অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় সজিব নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে আরামনগর আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে মোটরসাইকেল যোগে যাওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় দুজনের মৃত্যু হয়।

২০১৯ সালে লোকশেড রেল ক্রসিংয়ে বিলকিস আক্তার নামে এক মহিলা ট্রেনে কাটা পড়েন। কিছুদিন পর তার মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালে একটি ট্রাক্টর পৌরসভার বাউসি লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়ে। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাক্টর চালক নিহত হন। বাকি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়ত ঘটেছে দুর্ঘটনা। এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে সবাই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। অথচ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। অনেকে পায়ে হেঁটে ডান-বাম না তাকিয়েই পার হচ্ছে লেভেল ক্রসিং। তালিকার বাইরে আরও অনেক লেভেল ক্রসিং থাকলেও রেল কর্তৃপক্ষের কাছে সেগুলোর কোনো হিসেব নেই। এদিকে বিভিন্ন জায়গাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগালেও সেগুলো এখন আর চোখে পড়ে না। স্থানীয়রা অবিলম্বে এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে গেট নির্মাণ করে গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানান।

এদিকে স্থানীয় অনেকেই বলেন- সাতপোয়া জামতলা মোড় এলাকার রেলক্রসিংয়ে একজন লাইনম্যান নিয়োগ দেওয়া জরুরি। এখানে প্রতিবছর ২/৩ জন করে মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়। জায়গাটা এমন ভাবে পরিণত হয়েছে, এদিকে থেকে ট্রেন আসলেও দেখা যায় না অন্যদিক থেকেও আসলে দেখা যায় না। অরক্ষিত এইসব লেভেল ক্রসিং থেকে বাচঁতে সুরক্ষা চায় এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ উপপরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন- সব লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকলে দুর্ঘটনা কমে যেতো। সম্প্রতি শিশুটির মৃত্যু সত্যিই দুঃখজনক। 

এ-ব্যাপারে সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) আসাদউজ্জামান আসাদ বলেন, ‘গেটম্যান নিয়োগের বিষয়টি তাদের এখতিয়ারভুক্ত কাজ নয়। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গেটম্যান নিয়োগের বিষয়গুলো দেখে থাকেন। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content