প্রতিনিধি ৫ এপ্রিল ২০২১ , ৮:১৯:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
সাদুল্যাপুরে একটি ব্রিজের কারণে ১৭ বছর ধরে রাস্তায় চলাচল বন্ধ রয়েছে এলাকার মানুষের। ব্রিজটি রাস্তা থেকে অনেক ‘উঁচু’। কিন্তু তাতে ওঠার জন্য নেই রাস্তার সংযোগ। যার কারণে ওই রাস্তায় কোন যানবাহন চলাচলতো দূরের থাক, পথচারী পর্যন্ত চলাচল করতে পারেনা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, মানুষের উপকারে না আসা এমন ব্রিজ আছে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ক্ষোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের মাইটালের রাস্তা নামক একটি গ্রামীণ সরু রাস্তায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজটি নির্মাণ করে এলাকার মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছে।
এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই গ্রামীণ রাস্তায় দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর আগে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বিগত প্রায় দেড় যুগ সময়ের মধ্যে এই রাস্তায় কোন পথচারী ব্রিজটির উপর দিয়ে চলাচল করতে পারেনি। মানুষের হাটাচলা না থাকায় ব্রিজটির ছাদে মাঝে মাঝে সবজি চাষ করেন আশপাশের জমির মালিকরা। এবারও শীত মৌসুমের শুরুতেই ওই ব্রিজের ছাদে শিম চাষ করা হয়েছিলো বলে জানান এলাকার কয়েকজন।
এই রাস্তায় ব্রিজটির কাজ কি এমন প্রশ্ন করতেই ওই এলাকার স্কুল শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, সেটি আপনি নিজ চোখে দেখেন? এসময় তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আশরাফ হোসেন বাবলু বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের পর পথচারী চলাচল-তো দূরে থাক, অন্য কোন প্রাণিও ব্রিজটির উপর দিয়ে পার হতে পারেনি। তারা বলেন, ব্রীজটি এভাবে নির্মাণ করে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে। ব্রিজটির কারণে এই রাস্তায় এখন পায়ে হেটেও চলাচল করা যায়না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) ব্রিজটি নির্মাণ করেছে। বিগত ২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরে ব্রিজটি নির্মাণ করে ওই প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে দেখা যায়, ওই স্থানে ব্রিজের তেমন প্রয়োজন নেই। যার কারণে ব্রিজটি নির্মাণের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি আর খোঁজখবর রাখেনি। ব্রিজটি এত বেশি উঁচু যে, সেটিতে উঠার সংযোগ রাস্তা নেই। তাই ব্রিজটি এলাকার মানুষের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিজটি না থাকলে ওই রাস্তায় পায়ে হেটে অথবা যানবাহনে চলাচল করা যেত। কিন্তু ব্রিজের কারণে সকল ধরণের চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এসডিএফের সাদুল্যাপুর উপজেলার বকসিগঞ্জ ক্লাষ্টারের ক্লাষ্টার ফেসিলিলেটর সুলতান আহম্মেদ জানান, সেই সময়ে এসডিএফ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কাজসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করা হত। কিন্তু এখন গ্রমীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করা হয় না। আর ওই ব্রিজটি নির্মাণের সময়েই পরিকল্পনায় সামান্য ভুল থাকায় সেটি দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারছে না। রাস্তাটি উঁচু করা গেলে ব্রিজটি মানুষের উপকারে আসতো। ব্রিজটি নির্মাণে কত টাকা ব্যায় হয়েছিলো সেটি জানাতে পারেনি এই কর্মকর্তা।
উপজেলার ক্ষোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজু মিয়া বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই ব্রিজটি এই অবস্থায় দেখছি। মানুষের কল্যাণে ব্রিজটি সচল করতে সরকারী, বে-সরকারী কোন বিভাগ দায়িত্ব নেবে সেটি খুঁজেই পাচ্ছিনা। এটি নিয়ে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। ব্রিজটি যাতে মানুষের হাটাচলার উপযোগী হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী কামরুল হাসান রনি বলেন, ওই উঁচু ব্রিজটি এই দপ্তর থেকে নির্মাণ করা হয়নি। ব্রিজটি দেখে মনে হচ্ছে সেই সময়ে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। তাই প্রয়োজনে অফিসিয়াল কাগজপত্র খুঁজে দেখে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। তবে সব মিলিয়ে মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ব্রিজটি চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে কবে নাগাদ ব্রিজটি চলাচলের উপযোগী হবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীনেওয়াজ জানান, সেই সময়ে ব্রিজটি নির্মাণে অত্র দপ্তরের কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলো কিনা সেটি আমার জানা নেই। কিন্তু জনগণের সুবিধার্থে বিশাল অর্থ ব্যায় করে যদি গ্রামীণ রাস্তার ওই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি সচল হচ্ছেনা কেন? তবে যাই হোক ব্রিজটি মানুষের চলাচলের উপযোগী করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।