প্রতিনিধি ২৮ মে ২০২০ , ৯:১৩:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মজিবুর রহমান, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোণার কেন্দুয়ার বাউল কবি মো. আব্দুস সালাম সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর ডানপায়ের উরুতে ও হাঁটুতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। এতে তাঁর উরুর হাড় ভেঙে গেছে বলে চিকিৎসরা জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মে) সন্ধ্যায় কেন্দুয়া পৌর শহরের বাউল আব্দুস সালাম সরকারের বাসায় গিয়ে তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত ২৪ মে বোববার বিকালে কেন্দুয়া থেকে মোটরসাইকেলে করে নেত্রকোনা জেলা শহরে যাওয়ার পথে ফচিকা নামক স্থানে অন্য একটি মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা লেগে উল্টে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হন।
এসময় স্থানীয়রা আহত বাউল সালাম সরকারকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা করেন এবং বাউল সালামের ডান উরুর হাড় ভেঙে গেছে বলে জানায়। খবর পেয়ে সালাম সরকারের পরিবারের লোকজন ওইদিনই বাউলকে কেন্দুয়ায় নিজ বাসায় নিয়ে আসেন। পরে বাউলের অবস্থার অবনতি দেখে পরদিন গত মঙ্গলবার (২৬ মে) উন্নত চিকিৎসার জন্য বাউল সালামকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. আব্দুল মুন্নাফ (তুহিন) বাউলেরর ডানপায়ে প্লাস্টার করে চিকিৎসা দেন। বর্তমানে নিজ বাসায়ই চিকিৎসাধীন রয়েছেন এই বহুমাত্রিক গুণী বাউল শিল্পী। তবে তাঁকে সুস্থ হতে পায়ে সার্জারী অপারেশন লাগবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
“কি সুন্দর এক গানের পাখি মন নিয়া সে খেলা করে,'জীবন মানেই তো যন্ত্রণা', 'তুই আমার জীবনরে বন্ধু তুই আমার জীবন', 'প্রেমের মানুষ ঘুমাইলে হয় যন্ত্রণা' এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা বাউল কবি সালাম সরকার ১৯৬৭ সালের ৪ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলার জয়পাশা গ্রামের বাবা প্রয়াত আব্দুল জব্বার ও মাতা মৃত পরিষ্কারেরন্নেছা কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন। তবে বাউল সালাম সরকার দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত সপরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন কেন্দুয়া পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড মোড় সংলগ্ন এলাকায়।
শিশু বয়সেই গানের সঙ্গে যুক্ত হন বাউল সালাম। তিনি কেন্দুয়া উপজেলার বৈশ্যপাট্টা গ্রামের প্রখ্যাত বাউল কবি আবেদ আলীর শিস্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দড়িজাহাঙ্গীরপুর গ্রামের বিশিষ্ট বাউল কবি মকবুল হোসেনের শিস্যত্ব গ্রহণ করে বাউল গান ও বিভিন্ন শাস্ত্রীয় তথ্য শিক্ষা গ্রহণ করেন।
আশি ও নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় বাউল সালাম সরকার বর্তমানেও দেশ ও দেশের বাইরে জনপ্রিয়তার আসন ধরে রেখেছেন। বাউল সালাম সরকার শুধু একজন শিল্পীই নন, তিনি একজন মূলধারার কবি,গীতিকার ও সুরকারও। তাঁর নিজের লেখা দুই হাজারের বেশি গান সুর তিনি নিজেই করেছেন।
গান নিয়ে ভ্রমণ করেছেন লন্ডন, দুবাই, কাতারসহ বিভিন্ন দেশ। বাউল সালামের অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে । প্রচুর ক্যাসেট ও এ্যালবাম প্রকাশ করেছেন তিনি।
ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চলে এমন মানুষ পাওয়া দুঃসাধ্য-যারা বাউল সালামের অন্তত দুএকটা গান শোনেননি। শুধু গ্রামের মানুষেই নন, শহরাঞ্চলের আধুনিক জীবনধারায় অভ্যস্ত মানুষেও তাঁর গানের ভক্ত । মালজোড়া গানেও তিনি বেশ পারদর্শী। তাঁর নাম শুনলে গানের আসরে হাজার হাজার শ্রোতার আগমন ঘটে। নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় শিল্পীরা প্রায়ই বেতার-টেলিভিশনে তাঁর লেখা ও সুর করা গান গেয়ে থাকেন।
বাউল সালাম সরকার তাঁর নিজের শিস্য ও ভক্তবৃন্দসহ দেশবাসীর কাছে দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, 'মানুষের ভালোবাসা নিয়েই আমি বেঁচে আছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন দ্রæত সুস্থ হয়ে আবারো আপনাদের সাথে চলতে পারি।