চট্টগ্রাম

হাটহাজারীতে বন্যায় ক্ষতি ১৪৭ কোটি

  প্রতিনিধি ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩:৩২:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

হাটহাজারীতে বন্যায় ক্ষতি ১৪৭ কোটি

হাটহাজারীতে সপ্তাহব্যাপী বন্যার পর বেরিয়ে আসছে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসাব মতে টানা বন্যায় ১৪৭ কোটি টাকার বেশী ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘর, কাঁচা পাকা সড়ক, শস্যক্ষেত, ব্রিজ-কালভার্ট, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নলকূপ, বিদ্যুত লাইন, সাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্যার ভয়াল থাবা থেকে কিছুই বাদ পড়েনি।

নিরাপদ স্থান থেকে বাড়ি ফিরে অনেকের মাথায় হাত। থাকার চৌকি, রান্নার চুলা, আসবাবপত্র সব কিছুই নস্ট। অনেক পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাই নেই আপন ঘরে। অনেকের ঘরবাড়ি বিশেষ করে কাঁচা ও মাটির ঘর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভেঙে পড়ছে।

অনেক গ্রামীণ সড়কের ক্ষতস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে গাড়ি চলাচলে। সড়কের পাশ নরম থাকায় গাড়ির চাপে তা ভেঙে পড়ছে। মাথায় হাত পড়েছে প্রায় নয় হাজার কৃষকের। আমন বীজতলা, শস্যক্ষেত হারিয়ে পরিবারের উপার্জন বন্ধের উপক্রম। উপার্জন বন্ধ পরিবারের একমাত্র সম্বল মুরগীর ফার্ম হারিয়ে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাটহাজারীতে বন্যায় প্রায় ১৪৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৪ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় সড়কের ক্ষতি হয়েছে ২ শ ৭২ কিলোমিটার এর মধ্যে পাকা ১০৩.৬৫ কিঃমি, ইট বা খোয়া দ্বারা নির্মিত ৮০.৮২ কিঃ মি ও কাঁচা সড়ক ৮৭.৫৩ কিঃ মি।

কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৭৪৯ হেক্টর কৃষিজমি। যার মধ্যে শস্যক্ষেত ১ হাজার ৬৫৯ ও বীজতলা ৯০ হেক্টর। বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩শ ১৮টি। যার মধ্যে সম্পূর্ণ ৯২ ও আংশিক ২শ ২৬ ঘর। ৯০ টি ব্রিজ কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে যার মধ্যে ৪ টি ব্রিজ ও ৮৫ টি কালভার্ট। ২৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে যার মধ্যে ১৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় , উচ্চ মাধ্যমিক ৭ টি, কলেজ ও মাদ্রাসা ২ টি করে ৪ টি। বিশুদ্ধ খাবার পানির নলকূপ ক্ষতি হয়েছে ১হাজার ২১৫ টি যার মধ্যে গভীর নলকূপ ৫০৯ ও অগভীর নলকূপ ৭০৬ টি।

এ ছাড়া ভেসে গেছে ১ হাজার ৬৫০ টি পুকুরের চাষ করা মাছ। হালদা নদীর বাঁধ ভেঙেছে ০.২৩ কিঃ মি। ১১০ হেক্টর বনায়ন ও ০.৫ হেক্টর নার্সারী। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২ টি ক্লিনিক ও ১১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক। তা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী থেকে ডিম আহরণকারী ১শ ৫৬ টি নৌকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক সরেজমিন প্রদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘরের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্থরা আশার আলো দেখছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করে তাদের আমন চারা ও বীজ প্রদানের উদ্যোগ নিলেও তাতে কৃষকরা তেমন লাভবান হচ্ছে না বলে জানান তারা। তারা বলেন, অনেকের বীজ বপনের সময় এখন নেই। পাশাপাশি যাদের চারা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাদের চারা প্রদানের পাশাপাশি যদি সারের ব্যবস্থা করে দেয়া না হয় তাহলে অধিকাংশ কৃষকই ঘুরে দাড়াতে পারবেন না।

বর্তমানে কৃষি শ্রমিকের দৈনিক বেতন এবং উচ্চমূল্য সার কিটনাশক ক্রয় তাদের পক্ষে দেয়া অসম্ভব। আমন রোপনের মাস খানিক পরেই ভয়াল এ বন্যা কৃষকদের জন্য অভিশাপ বলে উল্লেখ করেন অনেকে। তাই সরকারকে কৃষকদের পাশে দাড়াতে উদাত্ত আহবান কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের। এদিকে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ক্ষতিগ্রস্থের তালিকা উর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

বরাদ্দ পেলেই ক্ষতি পুষাতে কাজ শুরু করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, ক্ষতির তালিকা পেয়েছি। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছি।

আরও খবর

Sponsered content