বাংলাদেশ

৮ বছর পর ‘বন্দিশালা’ থেকে যেভাবে মুক্তি পেলেন আযমী

  প্রতিনিধি ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩:০৬:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

৮ বছর পর ‘বন্দিশালা’ থেকে যেভাবে মুক্তি পেলেন আযমী
ছবি: সংগৃহীত

বিনা অপরাধে দীর্ঘ ৮ বছর ‘বন্দিশালা’ নামের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন তিনি মুক্তি পান। ৬ আগস্ট দিবাগত রাতে তাকে রাজধানীর বাইরে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

দীর্ঘ ৮ বছরের গুম জীবনের নানান বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সেখানে বন্দিদশা থেকে মুক্তির ঘটনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, গত আগস্ট মাসের ৫ তারিখ যে বিপ্লব হয়েছে সেটি আমি জানতাম না। সেদিন (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার সময় এসে আমাকে বলা হলো আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বললাম, আমিতো ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাই। যদি দুইটার দিকে আসে আমার সুবিধা হয়। তাদের আমি বললাম, কয়েকদিন আগেই আমাকে ডাক্তার দেখে গিয়েছেন। রক্ত পরীক্ষাও করলেন। এখন আবার আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন?

তখন তারা বললো, আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সে অনুযায়ী আমাকে মুখোশ পরিয়ে আরেকটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাতে যখন আমাকে বলা হলো, আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব। তখন আমি বললাম, আট বছর ধরে আপনাদের বলছি আমার দাঁত ভেঙে গেছে, আমার কানের সমস্যা হচ্ছে। এতদিন আপনাদের বলছি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান, আপনারা নিয়ে যাননি। আর এখন বলছেন, হাসপাতালে যেতে হবে। এটা কেমন কথা?

এরপর চোখ বেঁধে আমাকে গাড়িতে তোলা হয়েছে। তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছিল। আমি বললাম ঢাকা শহরের কোনো হাসপাতাল তো এত দূরে না। আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? কেউ কোনো জবাব দিলো না। রাস্তা ভাঙাচোরা। আমি বললাম, ঢাকা শহরের কোনো রাস্তা তো এত ভাঙাচোরা না। আমি বললাম, আপনারা কি আমাকে কোনো গ্রামের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন নাকি? তারা কোনো জবাব দিলো না। পরে আমাকে আরেকটি বন্দিশালায় নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, আমি অনুমান করতে পারি, ওইদিন রাস্তায় ছাত্র-জনতা গাড়ি চেক করছিল। সেজন্য তারা আমাকে গ্রামের রাস্তা দিয়ে নিয়ে গেছে। পরে তারা বলল, আপনি এখানে থাকেন। আমি বললাম, আপনারা না আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসবেন এটা কোথায় নিয়ে এলেন? তারা বললো, আপনাকে পরে জানানো হবে।

মুক্তির ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৬ আগস্ট আমাকে একজন জানালো, আজ আমাকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। একজন বলল, আপনার কাপড়ের সাইজ বলেন। আমি বললাম, আমি তো গার্মেন্টের কাপড় পরি না, সাইজ বলতে পারবো না। পরে একটা কাপড় নিয়ে আসা হলো। যেটা আপনারা দেখেছেন মুক্তির পরে প্যান্ট-শার্ট। ওটা পরে দেখলাম ঠিক আছে। বাইরে কী হচ্ছে সে খবরই তো নাই আমার কাছে। পরে সোয়া ৯টার দিকে আমাকে নিয়ে তারা রওনা হলো। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা সড়কের পাশে আমাকে নিয়ে তারা ছেড়ে দিলো। বললো, গাড়ি আসবে গাড়িতে উঠে আপনি চলে যাবেন। তখন রাত পৌনে বারোটা বাজে।

গাড়ি ভাড়া হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আমাকে টাকা দিলো। আমি বললাম ঢাকার ভাড়া কত? তারা বললো, ঠিক জানি না। বললাম, এখানে কত টাকা আছে। তারা বলল, পাঁচ হাজার টাকা। আমি বললাম আমি আপনাদের টাকার মুখাপেক্ষি নই। এখান থেকে ঢাকার ভাড়া যত সেই টাকাই দিন। তারা বলল আপনি যা করেন, করেন দান করেন, কিছু টাকা আপনাকে নিতে হবে। তাদের সঙ্গে এক সেকেন্ড কথা বলার আমার রুচি ছিল না। এরপর তারা আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।

মুক্তির সেই মুহূর্তের সম্পর্কে আযমী বলেন, যখন আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয় আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলাম না। এরপর দেখলাম একটা গাড়ি আসছে। আমার মনে হচ্ছিল, ঝাঁপ দিয়ে বাসে মধ্যে উঠি। পরে আমি বাসে উঠলাম। আমার স্ত্রী এবং চাচাতো ভাইয়ের ফোন নম্বর আমার মনে ছিল। বাসের একযাত্রীর থেকে ফোন চেয়ে নিয়ে আমি তাদের ফোন করি। বাস আমাকে টেকনিক্যাল মোড়ে নামিয়ে দিলো। এরপর পরিবারের সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে ৮ তারিখ ভোরে আমি বাসায় গিয়ে পৌঁছি।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, দীর্ঘ বন্দিশালা কথিত ‘আয়নাঘর’ থেকে আমি ৮ বছর পর মুক্তি পেয়েছি। অন্যায়ভাবে আমাকে এখানে দীর্ঘদিন বন্দি করে রাখা হয়েছিলো। বন্দি জীবনে মৌন প্রতিবাদ হিসেবে নিজের চুল বড় রেখেছি। 

আযমী বলেন, আমার দিনগুলো কেমন কেটেছে মনে হলে বুক ফেটে যায়। একদিন আমাকে এসে বলা হলো, ‘আপনার লিখিত দিতে হবে। সেখানে আপনি লিখবেন, আমি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবেন না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিদেশে সুখে শান্তিতে থাকতে চাই৷ আমি বিদেশে চলে যাব।’

তখন আমি বলেছি, আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আপনারা আমাকে অবৈধভাবে অপহরণ করেছেন। আটক করে রেখেছেন, আমাকে নির্যাতন করছেন। আমি এটা প্রতিবাদে মিছিল মিটিং করতে পারছি না। তাই মৌন প্রতিবাদ হিসেবে বড় চুল রেখেছি। আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা আমি রাজনীতি করবো কি করবো না, আমি এ দেশে থাকবো কি থাকবো না। আল্লাহ আমাকে সেই সৎ সাহসটুকু দিয়েছিলেন। আমি এটা দৃঢ় ভাবেই বলেছি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে গুমের শিকার হন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আজমের সন্তান আবদুল্লাহিল আমান আযমী। দীর্ঘ ৮ বছর পরে গত ৬ আগস্ট দিবাগত রাতে তিনি কথিত সেই ‘আয়না ঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

আরও খবর

Sponsered content

আগামী বছরের শুরুতে ঢাকা সফরে আসবেন এরদোয়ান

অতিথি পাখিদের বিচরণে মুখর জাবির ক্যাম্পাস

‘মিরসরাইয়ে সাংবাদিকের উপরে হামলাকারী -হুমকিদাতাদের ছাড় দেওয়া হবেনা’

‘মিরসরাইয়ে সাংবাদিকের উপরে হামলাকারী -হুমকিদাতাদের ছাড় দেওয়া হবেনা’

পাইকগাছায় আদালতের এজলাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ

পাইকগাছায় আদালতের এজলাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ

আজ ঢাকায় আসছেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট

চট্টগ্রামে নতুন করে ১০৬ জনের করোনা শনাক্ত চট্টগ্রাম ব্যুারো: চট্টগ্রামে নতুন করে ১০৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) অস্তিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে নগরে ৯৪ জন এবং উপজেলাগুলোতে ১২ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ২৪ হাজার ১৭৫ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চট্টগ্রাম শহরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৫ নভেম্বর) সকালে গতকালের চট্টগ্রাম জেলার করোনা সম্পর্কিত এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আট ল্যাব এবং কক্সবাজারে ৮৫৫ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। উক্ত পরীক্ষায় চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১০৬ জন। চট্টগ্রামের মোট আক্রান্ত বেড়ে ২৪১৭৫ জন। এর মধ্যে নগরে ১৮১০০ জন এবং উপজেলায় ৬০৭৫ জন। চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩১৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ২২৩ এবং উপজেলায় ৯৪ জন। এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন মোট ১৭ হাজার ৫৩১ জ

চট্টগ্রামে নতুন করে ১০৬ জনের করোনা শনাক্ত চট্টগ্রাম ব্যুারো: চট্টগ্রামে নতুন করে ১০৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) অস্তিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে নগরে ৯৪ জন এবং উপজেলাগুলোতে ১২ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ২৪ হাজার ১৭৫ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চট্টগ্রাম শহরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৫ নভেম্বর) সকালে গতকালের চট্টগ্রাম জেলার করোনা সম্পর্কিত এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আট ল্যাব এবং কক্সবাজারে ৮৫৫ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। উক্ত পরীক্ষায় চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১০৬ জন। চট্টগ্রামের মোট আক্রান্ত বেড়ে ২৪১৭৫ জন। এর মধ্যে নগরে ১৮১০০ জন এবং উপজেলায় ৬০৭৫ জন। চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩১৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ২২৩ এবং উপজেলায় ৯৪ জন। এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন মোট ১৭ হাজার ৫৩১ জ