ঢাকা

অতিথি পাখিদের বিচরণে মুখর জাবির ক্যাম্পাস

  প্রতিনিধি ১৬ নভেম্বর ২০২২ , ৭:৪৬:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

মশিউর রহমান, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ

লাল সবুজের বাংলাদেশের প্রকৃতির পরিবর্তন জানার অনেক বিষয় রয়েছে, যেমন বসন্ত আসলে তার আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয় সবুজ প্রকৃতি, আর দীর্ঘ ১০ হাজার মাইল পথ পাড়ী দিয়ে শীত প্রধান দেশ থেকে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকপাড়ে উড়ে আশা অতিথি পাখিগুলো জানান দেয় শীতের আগমনী বার্তা। পাখিদের পাখঝাপটানী, কিচির মিচির জলকেলিতে সবার নজর কাড়ে বিদেশি প্রজাতির পাখিগুলো। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে পরিযায়ী অতিথি পাখি। পাখির কলোকাকলিতে মুখর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বর ঘেঁষা লেকে প্রায় হাজারের অধিক পাখির দেখা মিলেছে। লেকটির পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে আশ্রয় নিয়েছে তারা। কিচিরমিচির শব্দ, দল বেঁধে ওড়াউড়ি ডানা ঝাপটানি দিয়ে মাতিয়ে রেখেছে লেকটি। পরিযায়ীদের দেখতে লেকের পাড়ে ছুঁটে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কেউবা অপলক দৃষ্টিতে দেখছেন ভিনদেশি পাখির নানা খেল-তামাশা, কেউবা তুলছেন ছবি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা রঙ্গের পাখি দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুঁটে আসছে দর্শনার্থীরা। আর বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখির অভয়ারন্য হিসেবে গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ষড়ঋতুর এ দেশে শীত আসছে উৎসব আমেজে। প্রকৃতির এমন বৈচিত্রময় উৎসবটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটু বেশীই। শীতের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে আসতে শুরু করেছে হাজার হাজার অতিথি পাখি। ভোরের আলোয় অতিথি পাখির কলোকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গছে শিক্ষার্থীদের। এদিকে সকাল থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত অতিথি পাখিদের ছবি তুলতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় ফটোগ্রাফারদের।

এবার বেশির ভাগই ছোট সরালী ও বড় সরালী, এছাড়াও পিচার্ড, গার্গেনি, মানিকজোড়, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতাটুপি, লালগুড়গুটিসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা মিলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। অতিথি পাখি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে নতুন রুপে সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো। রক্ত লাল শাপলার সৌন্দর্যে মন মাতানো রূপ ধারণ করেছে ক্যাম্পাস। আর ভোর থেকেই পাখি দেখতে ভিড় করছে দর্শনার্থীরা।পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙা অন্যরকম অনুভূতি বলে মনে করেন শিক্ষার্থীদের।

দর্শনার্থীরা বলছেন, আসলে দেখেন আমরা তো যান্ত্রিক শহরে বসবাস করি। চারপাশে ইট পাথরের জঞ্জাল। এখন শীতে শুরুতে যেটা হয় শহর থেকে একটু বাহিরে এখানে এসে পরিবারকে নিয়ে বাচ্চা কি একটা আনন্দ মুখর সময় কাটানো যায়। আর সাথে যেটা হয় যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি পাখি। আর আমাদের শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে ঢাকাবাসীদের এখানে এসে অতিথি পাখি দেখা।

এদিকে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের হলের পাশেই হচ্ছে লেক পাড়। প্রতিদিন সকাল বেলা এই অতিথি পাখিদের কলকাকলীতে আমাদের ঘুম ভাংগে। সকালে এই লেক পাড়ের পাশে বসেই আমরা নাস্তা করি। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি শাপলা ফুল আর পাখিদের ডানা ঝাপটানো এই কম্বিনেশনটা খুবই ভালো লাগে। আমাদের সকলের মনে হয় ভার্সিটি লাইফটা শেষ হয়ে গেলে এই অতিথি পাখিদেরকে বেশি মিস করবো।

বন্য জীবনের আলোকচিত্রী অরিত্র সত্তার বলেন, এখানে লেকপাড়ে সকাল থেকে এই অতিথি পাখিদের ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করছি। আমাদের আসলে ছবি তুলতে খুব বেশি ভালো লাগে কারণ হচ্ছে আমরা যখন ছবি তুলি অতিথি পাখিগুলো একদম কাছে চলে আসে। পাখিগুলো যখন ওড়াউড়ি করে তখন আমরা ছবির তোলার জন্য অনেক সুন্দর ফ্রেম পাই। ওভারঅল অন্যান্য জায়গার তুলনায় জাহাঙ্গীরনগর পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে অনেকটা নিরাপদ। আসলে আমরা বার্ড ফটোগ্রাফাররা সবাই একটা জিনিসই বলবে এখানে পাখির যে ধরনের দৃশ্য পাওয়া যায় সেটা বাংলাদেশের খুব কম জায়গায় এমন দৃশ্য দেখা যায়।

ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখির আগমনের বিষয়ে পাখি গবেষক ও জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুল হাসান জানান, সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষে পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। সে হিসেবে এবার কিছুটা দেরিতে তারা লেকগুলোতে বসতে শুরু করেছে যদিও বেশ কিছুদিন আগেই পরিযায়ী পাখি এসেছে জাহাঙ্গীরনগরে। তারা আশ্রয় নিয়েছে ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার নামে এক সংরক্ষিত এলাকায়। বিশেষ ওই এলাকাটি এখন পাখিতে ভরে গেছে।

এবিষয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল-হাসান বলেন, অতিথি পাখির বাসস্থান ও খাবারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে শাপলা আর পাখিদের অবিরাম খেলা বিমোহিত করছে। পাখি রক্ষায় নানা পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by