উপ-সম্পাদকীয়

❝দূর্নীতি ও চেতনা নিয়ে চলছে বেশ❞

  প্রতিনিধি ২৯ জুন ২০২৪ , ৭:৫৪:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

❝দূর্নীতি ও চেতনা নিয়ে চলছে বেশ❞

আমি যাকে ভোট দিয়ে এমপি মন্ত্রী বানিয়েছি তাঁর ছেলে-মেয়ে বাংলায় পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারে না। বাংলা বলতে পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল থেকে মাথার চুল পর্যন্ত কাঁপে। অথচ তাঁরা জনসমুদ্রের সামনে চেতনার কথা বলে। আমি আমার দেশের জাতিকে সভ্য জাতিতে রুপান্তর করতে যাকে নির্বাচন করেছি তিনার চারপাশে অসভ্যই পরিপূর্ণ। সাম্প্রতিক অনেকেই দূর্নীতিবাজ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে। মানুষ দূর্নীতি করে ভালো কথা তবে এটা কেমন দূর্নীতি? পুরো পুকুর না সাগর চুরি! আমার দেশের অনেক আমলা পরদেশে বেগম পাড়ায় সম্পদে পরিপূর্ণ করেছে। নিজের দেশে আগুন লাগিয়ে বিদেশে শান্তি করছে। তাদের পরিবারও দেখলাম সেখানে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছে।

আমার একাডেমিক ফলাফল তেমন ভালো না হলেও অতিরিক্ত খারাপ না। জিপিএ-৩ ও সিজিপিএ-২ নিয়ে নেতার (কিছু) ছেলে-মেয়ে দেশের মস্ত বড় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করে। দেশে এসে বাঙালির সামনে চেতনার বুলি দিয়ে ইংরেজিতে কথা বলে। আর যেটা সবচেয়ে বড় পোস্ট সেটাতে বসে পড়ে। অথচ আমি এক ভাইকে চিনি যার ছোট্ট একটা ১৫ হাজার টাকা চাকরির জন্য ১০ লক্ষ টাকা চা খেতে চেয়েছে। ভাবুন চা খেতে চেয়েছে বিরিয়ানি খেতে চাইলে কত চাইতো? আরেক ভাইকে জানি যে মোটামুটি ২৩ টা ইন্টারভিউ দিয়েছেন। এখনো পাগলের মতো ঘুরছে। আরো কত-শত জন কুচকুচে তিমির পার করছে বালিশ ভিজিয়ে।

আমি গাধার মতোই রাতদিন টিউশনি করে মাস শেষে বাসা ভাড়া দিতে পারি না। সেমিস্টার ফি’র জন্য কারো কাছে হাত টানতে হয়। কেউ কেউ ফিরে থাকালেও অনেকে মোটিভেশান দেয়। বাজারেতো আগুন জ্বলছেই। বাসার ময়লা ফেলা থেকে পানির বিল দেওয়া পর্যন্ত মাস শেষে বিষ পান করার টাকাও থাকে না। এই নিষ্ঠুর নগরে নিয়নবাতির নিচে নিজের ছায়া দেখে চোখের জল ফেলি। আমার মতো অজস্র আছে দেশে। আর হ্যাঁ, আমরা বেকারকে টাকাও ধার দেয় না। কারণ, সে বেকার টাকা ফেরত দিতে পারবে না। আমরা মানুষকে তখন সাহায্য করি যখন সৃষ্টি কর্তা ছাড়া কেউ কাজে আসে না। কষ্টে ধুকতে ধুকতে ক্যান্সার হলে নয়তো মাথার মস্তিষ্ক নষ্ট হলে। হাসপাতালের বিছানায় রোগ নিয়ে কাতরাইলে। একেবারে মরার উপক্রম হলে সাহায্য করি। তাও আবার অনলাইনে বিজ্ঞাপন ফটো দিয়ে।

মিডিয়ার সামনে লক্ষ টাকার পোষাক পরিধানে আপনি আমাকে চেতনা শিখান! ৭১ সময়কার মুক্তিযুদ্ধার কাপড় ও একজন বর্তমান সরকারি আমলার পোষাক ফকিরাপুল ও লিভারপুল তফাত! জান্নাতে থাকে মতো অবস্থা তাদের। প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে অগ্রগতি! তাদের ছেলেপুলেও এমন ভাবে চলাফেরা করে যেন কানাডা বা আমেরিকায় থাকে। অপর দিকে লক্ষ লক্ষ গরীব ও মধ্যবিত্ত ছাত্র-ছাত্রী মেধা থাকার পরেও ভালো জায়গায় সুযোগ হয় না। ভালো কোচিং ভর্তি হতে পারে না। ভালো কলেজে আসে না। আসলেও ঠিকঠাক চালাই যেতে পারে না। কারণ, তার বাবা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। মা কোনো মতে সংসার চালাচ্ছে। দুই একটা টিউশন করে নিজে চলে আবার ছোটো ভাই বোনদেরও দেখে।

গাড়ি ভাড়া, ময়লা, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নেট ও বাসা ভাড়া দিয়ে পকেট শূন্য হয়ে যায়। আর ওইদিকে যে সুদ খায় তার বাড়ির সীমানা প্রায় ২০ একর। দূর্নীতিবাজদের সম্পদ দেশ জুড়ে। নির্বাচনের সময় যে নেতা সবাইকে জড়িয়ে ধরতো তাঁকে সালাম দিয়ে একটা সাইন নিতে গেলেও মাধ্যমিক ফেইল ছোট ভাইয়ের পা’ ধরতে হয়। সহস্র কল দিয়ে পুচকে নেতাকে উসলাতে ফুসলাতে হয়। অথচ আমি গ্র্যাজুয়েট! নেতার চাঙ্গারা আমাকে পাত্তাই দেয় না। একটা সাইনের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। কত জনের কাছে যাইতে হয়। কেন ভাই আমি ভোট দেই নাই? আমার পরিবার ভোট দেই নাই? তাহলে এতো বৈষম্য কেন?

বড়রা বড় হচ্ছে ছোটরা ছোট হচ্ছে। না খেয়ে জীবন অতিবাহিত করছে অনেকই। কারো হাতে চেক বই ১০ টা কারো হস্তে ঋণের বই ২০ টা। কারো প্লেটে ডাল ভর্তা আর কারো প্লেটে গরু ইলিশ রান্না। কারো কাছে ৭২ লক্ষ টাকার গাড়ি কারো সামনে ২৭ টাকা ভাড়ার টিটি। কারো ঘরে এসি আবার কেউ বিদ্যুৎ গেলে খোলা মাঠে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, আল্লাহ কেন এই করুন পরিস্থিতিতে ফেললা? আমার এই দেশে জন্ম কী এতোটাই পাপের? আমার পূর্ব-পুরুষের কী কোনো অভিশাপ আছে? কখন আমি শান্তি পাব? কখন পরিবারের মুখে হাসি দেখবো? কখন চাকরি করবো? আমাদের জন্য কি কোথাও কেউ নেই?

ওমর ফারুক

ইংরেজি বিভাগ 

সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম।

আরও খবর

Sponsered content