বাংলাদেশ

কোটাবিরোধীদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ অ্যাটর্নি জেনারেলের

  প্রতিনিধি ৮ জুলাই ২০২৪ , ৬:১৮:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

কোটাবিরোধীদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ অ্যাটর্নি জেনারেলের
ফাইল ছবি

কোটা নিয়ে আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে রাজপথে আন্দোলন না করে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সোমবার (৮ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, আদালত (হাইকোর্ট) একটি আদেশ (কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা) দিয়েছেন। সে আদেশের বিরুদ্ধে সরকার তো আপিল বিভাগে গিয়েছে। এই মুহূর্তে আদালতের প্রতি যে আন্দোলনটা (কোটাবিরোধী), আমি মনে করি যে এটা না করাই উচিত হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি সরকারের পক্ষ থেকে এই মামলাটা (হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন) করেছি। আমরা শুধু আইনগত বিষয়টা দেখছি। এটা (কোটা রাখা না রাখা) সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এখানে আদালত কতটুকু হস্তক্ষেপ করতে পারে সেটাই আমরা আদালতের সামনে তুলে ধরেছি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ছিল ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা। এই কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ছয় বছর আগে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ ব্যানারে আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। সে সময় এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন নুরুল হক নুরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার। সব কাজ শেষে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনও কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয় কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর ৩ অক্টোবর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে সেখানে কোটা বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরদিন ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করেন জনপ্রশাসন সচিব।

পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এদিকে ২০২১ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিলের এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ ৭ জন। রিটে প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট একই বছরের ৭ ডিসেম্বর রুল জারি করেন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা পরিপত্র কেন স্বেচ্ছাচারী ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যানসহ পাঁচ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর গত ৫ মে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে রায়টি স্থগিত চেয়ে সরকার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে।

গত ৯ জুন এ আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে আসায় নানান রকম অসুবিধা হচ্ছে। কোটা থাকবে কি থাকবে না, এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।

অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানির পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ আন্দোলনের কথা তুললে চেম্বার বিচারপতি তাকে আদালতে আন্দোলন টেনে না আনার কথা বলে সতর্ক করেন। আর হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ না করে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

সেই ধারাবাহিকতায় গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগে আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে। আপিল বেঞ্চ আদেশ দেন, সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল থাকবে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়।

আরও খবর

Sponsered content