দেশজুড়ে

থামছে না নাটোরের গুলিবিদ্ধ শাকিলের মায়ের কান্না

  প্রতিনিধি ১৮ জুলাই ২০২৪ , ৫:২৫:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

থামছে না নাটোরের গুলিবিদ্ধ শাকিলের মায়ের কান্না

নাটোর সদর উপজেলার ছাতনি ইউনিয়নের হাটখোলা গ্রামের শাকিল ইসলাম (২৬) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শাকিলের বড় ভাই শামছুল হুদা।

শাকিল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে তার বাড়িতে চলছে আহাজারি। তার মায়ের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে। মায়ের আহাজারি কোনোভাবেই থামছে না।

শাকিল ইসলাম হাটখোলা গ্রামের ফেলু মন্ডলের ছোট ছেলে। বাবা ফেলু মন্ডল অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালান। মা সোনাভান বেগম মেধাবী ছেলেকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে অন্যের জমিতে কাজ করে পড়াশোনার খরচ পাঠাতেন। অনেক সময় বাড়ির বাজারের টাকাও পাঠাতে হতো ছেলেকে। ছেলে একদিন সরকারি চাকরি করবেন সেই আশা-স্বপ্ন বুকে বেঁধে ছিলেন মা। সেই আশায় আজও মানুষের বাড়িতে জমিতে কাজ করে চলেছেন তিনি। কিন্তু ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন গিয়ে সেই ছেলে গুলিবিদ্ধ, এটা তিনি মানতেই পারছেন না।

বুধবার (১৭  জুলাই) বিকেলে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পায় পরিবার। বর্তমানে শাকিল এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শাকিলের বড় ভাই শামছুল হুদা বলেন, আমার ভাই ছোট বেলা থেকেই অনেক মেধাবী। সে ৫ম শ্রেণি থেকে বৃত্তি পায়। আমরা অনেক আশায় আছি, ভাই পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করবে। সংসারের দায়িত্ব নিবে। গ্রামের সবাই তার জন্য পাগল। তাকে সবাই স্নেহ করে। হঠাৎ তার বন্ধুরা ফোন করে বলে শাকিলের গায়ে গুলি লেগেছে। আমরা তো বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না। আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন, সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

বাবা ফেলু মন্ডল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মঙ্গলবার ছেলে ফোন করে বলে আব্বা আমরা বাইরে আছি। ঢাকায় কোটা নিয়ে আন্দোলন চলছে। এখন শুনি, আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এত কষ্ট করে মানুষের জমি নিয়ে চাষ হরে ছেলেকে পড়াশোনা করালাম। আজ আমার ছেলে মৃত্যুর মুখে। কিভাবে সহ্য করবো। ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাকিলের মা সোনাভান বেগম বলেন, আমার ছেলে পরশুদিন ফোন করে আমার সঙ্গে কথা বলে। আমি বললাম, বাবা তুমি ভাত খাইছো, তখন ছেলে আমার কোনো উত্তর দিলো না। আমাকে বললো, মা ৫০০ টাকা লাগবে। আমি বললাম বাবা সকালে পাঠায় দেবোনি। এরপর বাবা আমার ফোন কেটে দিলো। আজ শুনি আমার ছেলেকে নাকি গুলি করা হয়েছে। কত কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখাইলাম। খেয়ে না খেয়ে মানুষের বাড়িতে জমিতে কাজ করে ছেলেকে এ পর্যন্ত এনেছি। আমার ছেলেকে ছাড়া কি করে বাঁচব।

ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন সরকার বলেন, বিষয়টি শুনেছি। ছেলেটি অনেক মেধাবী ছাত্র। তার সুস্থতার জন্য দোয়া করি।

আরও খবর

Sponsered content