রংপুর

উলিপুরে স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রীর আহাজারি 

  প্রতিনিধি ৩১ জুলাই ২০২৪ , ৩:০২:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রীর আহাজারি

কুড়িগ্রামের উলিপুরে স্বামীকে হারিয়ে চার মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে স্ত্রীর আহাজারি। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়াই কি ছিলো তার অপরাধ বলেই কেঁদে ফেলেন স্ত্রী রিফাত জাহান ঋতু।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে একমাত্র কর্মক্ষম সন্তান রায়হানুল ইসলাম রায়হানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা আব্দুর রশিদ মা রাহেনা বেগম। রায়হানের হত্যাকারীর বিচার চান স্ত্রী, মা-বাবা, প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। 

পরিবার ও স্বজন সুত্রে জানা যায়, রায়হান রাজধানীতে ষ্টক এ্যন্ড সিকিউরিটি কোম্পানিতে সহকারী ম্যানেজার হিসাবে চাকুরী করতেন। নিহত রায়হান কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌর শহরের মুন্সিপড়া এলাকার আব্দুর রশিদের এক মাত্র সন্তান রায়হান।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ এক মাত্র কর্মক্ষম সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধপ্রায়। শেষবার আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে স্ত্রী ও চার মাসের শিশু সন্তানকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো রায়হানের। কিন্তু সেটা আর ঢাকায় যাওয়া হলোনা স্ত্রী ও শিশু সন্তানের। 

১৯ জুলাই শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় জুমার নামাজ শেষে স্থানীয় হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে রাস্তায় বের হয়ে ভাড়া থাকা বাসায় ফেরার সময় কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে যান রায়হান। সে সময় একটি গুলি ডান পাশের চোখের উপরে লেগে যায়। এতে ঘটনা স্থলে তার মৃত্যু হয়। পরেরদিন ২০ জুলাই শনিবার ঢাকা থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে এসে উলিপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে রায়হানকে দাফন করা হয়। 

রায়হানের স্ত্রী রিফাত জাহান ঋতু (২৫) বলেন, শুক্রবার ১৯ জুলাই দুপুরে তার সাথে শেষ কথা হয়। আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সন্তান সহ আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। সে ফিরলো লাশ হয়ে। তার কি অপরাধ ছিলো, তাকে হত্যা করা হলো। তার নামাজ পড়তে যাওয়াই কি ছিলো অপরাধ। সে সময় তার ঘারে জায়নামাজ ঝুলানো ছিলো। সে তো কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলো না। কেনো তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হলো। আমি তার হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই। আমার চার মাসের সন্তান রাপনাজ বিনতা রায়হান এতিম হলো তার দায়ভার কে নিবে ক্ষতিপূরণ কে দিবে বলে কাঁদতে থাকেন।

রায়হানের মা রাহেনা বেগম বিলাপ করে বলেন, এক মাত্র সন্তান আর পৃথিবীতে নেই। আমি কাকে নিয়ে থাকবো। আমার আর কেউ নেই। আমার হাসিখুশি সন্তান ও পরিবারকে শেষ করে দিলো। আমার রায়হান আর ফিরে আসবেনা। রায়হানের মা জানান, রায়হান জুমার নামাজ আদায় করতে গেছেন বাড্ডা মসজিদে। তার সাথে আমার ৩ টায় কথা হলে আমার খাওয়ার খবর নেয়। আর খাবার খবর কে নিবে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রায়হানের মা রায়হান হত্যার বিচার চান। 

রায়হানের বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, রায়হান উলিপুর থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে ঢাকায় উচ্চশিক্ষা অর্জন করে রাজধানীতে ষ্টক এ্যন্ড সিকিউরিটি কোম্পানিতে সহকারী ম্যানেজার হিসাবে চাকুরী করতেন। ৫ বছর আগে বিয়ে করেন রায়হান।

শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে বাসায় ফেরার পথে মাথার কাছে ডান চোখের উপরে গুলি লেগে মারা যায়। রায়হানের মৃত্যুতে আমি প্রায় বাকরুদ্ধ হয়েছি। কিছু বলার ভাষা নেই হারিয়ে ফেলেছি। রায়হান আমার পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম সন্তান। তাকে হারানোর শোক কিভাবে বুকে ধারণ করবো বলে কেঁদে ফেলেন। তিনি সন্তান হত্যার বিচার চান।

৬ নং ওয়ার্ড এর পৌর কাউন্সিলর আবুল কাশেম জানান, রায়হানুল ইসলাম রায়হান পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম সন্তান। তার মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রায়হান অনেক ভালো ছেলে ছিলো। পরিবার থেকে জানতে পেরেছি শুক্রবার (১৯ জুলাই) জুমার নামাজ আদায় করে বাসায় ফেরার পথে দুর্ঘটনায় স্বীকার হন রায়হান। রায়হানের চার মাসের এক শিশু সন্তান আছে বলে জানান তিনি। 

আরও খবর

Sponsered content