প্রতিনিধি ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫:৩৫:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ক্ষমতার মালাই খাওয়া জামায়াতে ইসলামির উদ্দেশ্য নয়। সমাজের গুণগত একটা পরিবর্তন আনাই জামায়াতের উদ্দেশ্য। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ বিপ্লব, এই পরিবর্তন এই আন্দোলনের সফলতা একে অবশ্যই আমরা পাহাড়াদারি করবো। এর কোন ধরণের অপমান এ জাতি সহ্য করবে না।
এ আন্দোলন বিশেষ কোন জনগোষ্ঠীর কিংবা সম্প্রদায়ের নয়। এর জন্য আপামর জনগন রাস্তায় নেমে এসে সফল করেছে। এর জন্য নির্দিষ্ট কোন ধর্মের লোকেরা শুধু লড়াই করে নাই। জাতি দল ধর্ম নির্বিশেষে আপামর জনতার এ আন্দোলনকে কেউ যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায় তাহলে আবারও বাংলাদেশের ১৮কোটি মানুষ তা রুখে দেবে। আমরা সেই ১৮ কোটি মানুষের অগ্রভাগে থাকবো, আমরা কথা দিচ্ছি। তিনি বলেন, সম্পদ ও ইজ্জত লুন্ঠনকারীদের প্রতিহত করতে হবে।
সোমবার সকাল ১০ টায় দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাড়াকাড়ি মারামারি হতো, মানুষ চলাফিরা করতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতো। এখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই ভরসা। এই বন্যার সময় নিজেরা প্রথমে যা পেরেছে তাই দিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমার বাড়িতে যদি পাহাড়া না লাগে, আমার মসজিদে যদি পাহাড়ার প্রয়োজন না হয়, তাহলে হিন্দু বন্ধুদের মন্দিরে পাহাড়ার প্রয়োজন হবে কেন। আমরা এই ধরনের কোন বৈষম্য চাই না। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গিয়েছে এর মাধ্যমে সকল প্রকার বৈষম্যের কবর রচনা হউক। এমন একটি দেশ এমন একটি জগত আমরা আমাদের এখানে চাই যেই দেশে জাতি দল ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে।
এদেশের নাগরিক হিসেবে দেশে এবং প্রবাসে যেখানেই থাকুক গর্বের সাথে বলবে আমি বাংলাদেশি। এখানে বিশেষ বিশেষ সময়ে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, বাড়িঘর পাহাড়া দেওয়ার প্রয়োজন হবেনা। কারণ যারাই জন্মগতভাবে এ দেশে জন্মগ্রহণ করবে তারা এদেশের সৌভাগ্যবান নাগরিক।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, দিনাজপুর উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মমতাজউদ্দীন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সাবেক জেলা আমীর আফতাবউদ্দীন মোল্লা, দিনাজপুর দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম, পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা ইকবাল হোসেন, দিনাজপুর উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা রবিউল ইসলাম, কর্মপরিষদ সদস্য এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ভুট্টু, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ, জাগপা কেন্ত্রীয় সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, ইকবাল প্রধানসহ প্রমুখ।
এর আগে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান রুদ্রের পাহাড়পুরস্থ বাসভবনে যান। তিনি বলেন, রুদ্রর মত হাজারও সাথী যারা জীবন দিয়ে গেল। এই জাতি যেন তাদের অবদান স্মরণ করে এবং তাদের রক্তের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা না করে। আগামী দিনে যারা দেশ চালাবে তারা যেন তাদের আবেগ ও চিন্তার জায়গাকে সম্মান করে। তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমরা সারাদেশ ঘুরে ঘুরে শহিদদের পরিবারে আবেগ অনুভুতিটা বোঝার চেষ্টা করছি।
তিনি তার বাবা-মাকে শান্তনা দিতে গিয়ে জামায়াতের আমীর এসব কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সাদাকে সাদা বলেন, কালোকে কালো বলেন, সঠিক জিনিসটি তুলে ধরবেন। এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রুদ্র সেনের বাবা অধ্যাপক সুবীর কুমার সেন, মা ও বোন।
মঞ্চে শহীদদের পরিবার: মঞ্চে শহীদদের পরিবারের উপস্থিতি হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। এ সময় জামায়াতে আমীর শহীদ মো. সেলিম উদ্দীনের পিতা কেনা মিয়া, শহীদ রুদ্র সেনের পিতা অধ্যাপক সুবির কুমার সেন, শহীদ মো. সুমন পাটোয়ারীর পিতা মো. ফারুক হোসেন, শহীদ রবিউল ইসলাম রাহুলের পিতা মো. মোসলেম উদ্দীন, শহীদ মো. আসাদুল হক বাবুর পিতা জয়নাল আবেদীন, শহীদ জিয়াউর রহমানের পিতা আব্দুল কাফি, শহীদ মো. মাসুম রেজার পিতা মিজানুর রহমানসহ পরিবারবর্গকে শান্তনা দিয়ে বলেন, আপনাদের প্রতি আমাদের শত শত ছালাম। আপনারা বীরের পরিবার।
অনুষ্ঠানে শহীদ ৭ জনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার করেন এবং শহীদ আসাদুল হক বাবুর গর্ভবতী স্ত্রীর খরচের সকল দায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন।