প্রতিনিধি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫:০৮:০০ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল সংকটের কারনে চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের।
দোহাজারী পৌরসভাসহ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলার আট ইউনিয়নের প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য ১৯৬৫ সালে ১০ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দোহাজারী হাসপাতাল। চাহিদার উপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে ১৯৯০ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল। ফলে জনবল সংকটে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী না থাকায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এছাড়া ৩১ শয্যার হাসপাতাল হলেও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় ১০ শয্যার।
দোহাজারী পৌরসভার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন সাতবাড়িয়া, হাশিমপুর, বৈলতলী, ধোপাছড়ি এবং সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, কালিয়াইশ, পুরানগড় ও ধর্মপুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তীস্থানে হওয়ায় দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। এসব ইউনিয়ন থেকে আসা রোগীদের চাপ সামলাতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের হিমশিম পোহাতে হয়। হাসপাতালটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মহাসড়কে কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে আহত রোগীদেরও ঠাঁই হয় দোহাজারী হাসপাতালে।
প্রতিদিন হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে গড়ে তিনশ থেকে চারশ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। নতুন ও পুরোনো মিলে ৩১শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন ভর্তি রোগী চিকিৎসা নেন এই হাসপাতালে। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স দ্বারা রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডেন্টাল সার্জনসহ ছয় জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও দোহাজারী হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত আছেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ চার জন চিকিৎসক। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক ছয় মাসের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চলে গেছেন। আরেকজন গেছেন প্রশিক্ষণে। অপরদিকে একজন চিকিৎসক কোভিডে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে এটাচমেন্টে গেলেও এখনো ফেরত আসেননি দোহাজারী হাসপাতালে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দুই জন ডাক্তার ধার করে এনে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার নাইট ডিউটি করতে হচ্ছে কর্মরত চিকিৎসকদের। নাইট ডিউটি করা চিকিৎসক পরের দিন স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েন।
এদিকে ছয় জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের স্থলে কর্মরত আছেন তিন জন। সহকারী নার্সের ৪টি পদ থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত পদগুলো শূণ্যই পড়ে আছে। ষোল শয্যার পুরুষ ও পনের শয্যার মহিলা ওয়ার্ডে দুইজন ওয়ার্ড বয়, একজন আয়া এবং দুইজন সুইপার রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অফিস সহকারীর দুইটি পদ থাকলেও ওই পদগুলো শূণ্য পড়ে আছে। জরুরি বিভাগে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) ও তার সহকারী না থাকায় ঝাড়ুদার, নৈশপ্রহরী, বাবুর্চী ও এ্যাম্বুলেন্স চালক দিয়েই চলছে কাটা-ছেঁড়া সেলাই ও ব্যান্ডেজ করাসহ জরুরি চিকিৎসা।
অফিস সহকারীর দুইটি পদও দীর্ঘদিন যাবত শূণ্য পড়ে আছে। ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চালানো হচ্ছে কর্মকাণ্ড। ফার্মাসিস্ট, রেগুলার স্টোর কিপার, কম্পিউটার অপারটর পদ থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত সেগুলোও শূণ্যই রয়ে গেছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) না থাকায় হাসপাতালের এক্সরে যন্ত্রটি দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ডেন্টাল সার্জন থাকলেও এসিস্ট্যান্ট পদে কাউকে পদায়ন করা হয়নি। ডেন্টাল মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় দন্ত রোগীরাও পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নেই চালকের পদ। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়ি চালকের মাধ্যমে এতোদিন এ্যাম্বুলেন্সে করে চমেকে রোগী পরিবহন করা হলেও এ্যাম্বুলেন্সটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে দীর্ঘদিন ধরে সেটি তালাবদ্ধ গ্যারেজে পড়ে আছে। দ্রুততম সময়ে দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এব্যাপারে দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাঃ আহমেদ তানজিমুল ইসলাম বলেন, “৩১শয্যার হাসপাতাল হলেও দোহাজারী হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন। দোহাজারী ও পার্শ্ববর্তী আট ইউনিয়নের রোগীরা দোহাজারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এজন্য হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ বেশি। অপ্রতুল জনবল নিয়ে বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জনবল সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”