চট্টগ্রাম

দোহাজারী হাসপাতালে জেনারেটর নেই, বিদ্যুৎ চলে গেলেই দুর্ভোগ

  প্রতিনিধি ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫:৪৯:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

দোহাজারী হাসপাতালে জেনারেটর নেই, বিদ্যুৎ চলে গেলেই দুর্ভোগ

বিদ্যুৎ না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ৩১শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে কোন জেনারেটর নেই। দুইটি আইপিএস থাকলেও ব্যাটারির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে একটি আইপিএস। ফলে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় বা লোডশেডিংয়ের সময় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভর্তি থাকা রোগী, চিকিৎসক ও নার্সদের। আলো পেতে এবং গরম থেকে বাঁচতে মোমবাতি ও হাতপাখার ওপর ভরসা করতে হচ্ছে তাদের।

দোহাজারী পৌরসভাসহ চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) উপজেলার আট ইউনিয়নের প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতালটি। ৩১শয্যার হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন এখানে ভর্তি রোগী থাকেন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন। বিদ্যুত চলে যাওয়ার পর এসব রোগীর পাশাপাশি চিকিৎসক এবং নার্সদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে। কারণ বিদ্যুত যাওয়ার পর গরমের সময় দিনের বেলায় অসহনীয় গরমের মধ্যে থাকতে হয় আর রাতের বেলায় বিদ্যুৎ গেলে এ দুর্ভোগ যেন সীমা ছাড়ায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসে দুইটি আইপিএস এর ব্যাটারি একসাথে নষ্ট হয়ে যায়। একটি ব্যাটারি লোকাল ফান্ড থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কেনা সম্ভব হলেও আরেকটি কেনা এখনো সম্ভব হয়নি। ফলে আইপিএস ব্যবহার করে স্বল্পসংখ্যক বাতি জ্বালাতে আগে তিন থেকে চার ঘন্টা বেকআপ পেলেও এখন একটি ব্যাটারিতে এক থেকে দেড়ঘন্টার বেশি বেকআপ পাওয়া যায় না। হাসপাতাল ও রোগীদের সুবিধার্থে গত বছর আগস্ট মাসে একটি আইপিএস দান করেছিলেন দোহাজারীর বাসিন্দা শিল্পপতি আলি আকবর। আট মাস চলার পর ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও একটা ব্যাটারির অভাবে চালু করা হচ্ছে না অন্যের দেওয়া সেই আইপিএস। 

এদিকে বিদ্যুত চলে গেলে আলো ও বাতাস না থাকার সুযোগে মশার আক্রমণ বেড়ে যায়। এতে বাধ্য হয়ে হাতপাখা ও মশার কয়েল ব্যবহার করতে হয় রোগীর স্বজনদের। কোনো কোনো রোগী আবার আলোর অভাবে সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়াও করতে পারেন না বলে অভিযোগ করেছেন। দুর্ভোগে পড়েন রোগীর সেবায় নিয়োজিত সেবীকারাও। আইপিএসের চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) কে। মোবাইলের টর্চলাইটের কম আলোতে কোনো কিছু স্পষ্ট দেখা যায় না। ফলে আহত রোগীদের কাটাছেঁড়া সেলাই করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন তাঁরা। প্যাথলজি বিভাগে বিভিন্ন পরীক্ষাগুলোও বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুত চলে গেলে আইপিএসের মাধ্যমে পরীক্ষা চলমান রাখা গেলেও আইপিএসের চার্জ শেষ হয়ে গেলে প্যাথলজিতে টাইফয়েড, প্রেগনেন্সি টেস্ট ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ছাড়া আর সকল সেবা বন্ধ রাখতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নার্স বলেন, বিদ্যুত না থাকলে রোগীদের তুলনায় নার্সদের দুর্ভোগ আরো বেশি। কারণ চিকিৎসক কোনো রোগীকে ভর্তি দিলে তারা যান নার্সদের কাছে। বিদ্যুৎ যাওয়ার পর আইপিএসের মাধ্যমে মাত্র এক ঘন্টা আলো পাওয়া যায়। রাতের বেলায় কখনো মোবাইলের টর্চ, আবার কখনো মোমবাতির আলোতে রোগীদের ক্যানোলা পরানোসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রস্তুত করি। রোগীদের আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা বিঘ্ন ঘটে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক জানান, চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নেন দোহাজারী হাসপাতালে। তবে এখানে বিদ্যুত গেলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। দিনের বেলায় বিদ্যুত গেলে সহ্য করতে হয় অসহনীয় গরম। আর রাতের বেলায় বিদ্যুত গেলে গরমের যন্ত্রণার পাশাপাশি অন্ধকারে চিকিৎসা সেবায়ও মারাত্মকভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। তখন হয় মোবাইলের আলো আর না হয় মোমবাতির আলোতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। রোগীদের সেবায় আমাদের এতো দুর্ভোগের পরেও একটি ব্যাটারি সংযোজন করে অকেজো আইপিএসটি চালু করা হচ্ছে না।

ভর্তি থাকা একজন রোগীর স্বজন কাজী আব্দুল মোমেন লাভলু নামের একজন শিক্ষক জানান, কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছা থাকলেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কারণ একটি হাসপাতাল কখনোই বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় থাকতে পারে না। আশা করি কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে। সমস্যাটির সমাধান হলে প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আবদুল্লাহ আল ইফরানের মোবাইলে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও খবর

Sponsered content