চট্টগ্রাম

মুলার রাজ্য দোহাজারী!

  প্রতিনিধি ২৯ অক্টোবর ২০২৪ , ৩:৪২:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মুলার রাজ্য দোহাজারী!

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজিভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা ছাড়াও চন্দনাইশ-সাতকানিয়ার বুক চিরে বয়ে যাওয়া শঙ্খনদের তীরবর্তী চরজুড়ে অধিক লাভের আশায় আগাম মুলাচাষ করেছেন চাষীরা।

শঙ্খচরের মুলা স্বাদে ও পুষ্টিতে অতুলনীয় হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলাসহ সারা দেশব্যাপী এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে পাইকারী ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার দোহাজারী রেলওয়ে মাঠ থেকে চাষীদের কাছ থেকে মুলাসহ অন্যান্য সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান চট্টগ্রাম মহানগরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

শঙ্খচরে মুলা চাষীরা প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি ক্ষেত থেকে মুলা উত্তোলন করে শঙ্খনদের তীরে এনে সংরক্ষণ করেন। পরদিন ভোর রাত থেকে শঙ্খ নদের পানিতে ধুয়ে তা পরিষ্কার করেন। ভোরের আলো ফুটতেই আঁটি বেঁধে নৌকা, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ভ্যান সহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এসব মুলা বিক্রির জন্য নিয়ে যান দোহাজারী রেলওয়ে মাঠে। পাইকারী বাজারে প্রতি বার (৭০/৮০) কেজি মুলা প্রকারভেদে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

দোহাজারীর রেলওয়ে মাঠে সবজির পাইকারি বাজারে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মুলাসহ নানা জাতের সবজি বিক্রি করছেন কৃষকেরা। পাইকার এবং গ্রামীণ হাট-বাজারের সবজি বিক্রেতারা এখান থেকে মুলাসহ নানা জাতের সবজি কিনে ট্রাকযোগে নিয়ে যাচ্ছেন।

দোহাজারী পৌরসভার কিল্লাপাড়া, রায়জোয়ারা, লালুটিয়া,  চাগাচর, দিয়াকুল, সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের রসুলাবাদ, মুন্সির চর, খাগরিয়া ইউনিয়নের মৈশামুড়া সহ শঙ্খনদ তীরবর্তী চরের কৃষকেরা সারা বছরই কম বেশি মুলার চাষ করে থাকেন। এখানকার কিছু কৃষক বেশি লাভের আশায় বর্ষাকালেও মুলাচাষ করে থাকেন। বাজারে দাম ভালো থাকায় আগাম মুলাচাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। অনেকে ইতিমধ্যে আগাম চাষ করা মুলা বিক্রি শেষ করে একই জমিতে নতুনভাবে আবার মুলার বীজ রোপণ করছেন। আগাম চাষে ঝুঁকিও রয়েছে। অভিজ্ঞ ও সাহসী কৃষকই আগাম মুলাচাষ করতে পারেন। অনেক কৃষক একই জমিতে বছরে কয়েক বার মুলার চাষ করেন। প্রথমে উৎপাদিত মুলা উত্তোলন করার পর পুনরায় মুলাচাষ করেন। এতে কৃষক অধিক লাভবান হন।

মুলাচাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি মুলা ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে ব্যাপকভাবে মুলা আসবে। তখন দাম কিছুটা কমতে পারে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, দাম একটু বেশি হলেও বাজারে মুলার চাহিদা রয়েছে। শীতের সবজি মুলা বাজারে আগাম পেয়ে লোকজন চড়া দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আর যেকোনো বাজারে শঙ্খ চরের মুলার বিশেষ কদর রয়েছে।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন জানান, “মুলা মূলত শীতকালীন সবজি। কৃষকরা শীতকালেই মুলা বেশি চাষাবাদ করেন। কিন্তু এই সময়ে দোহাজারী অংশের শঙ্খেরচরে কৃষকরা অধিক পরিমাণে মুলার চাষাবাদ করছেন। শুধু দোহাজারী এলাকাতেই ৫০ হেক্টরের অধিক জমিতে বর্তমানে মুলার চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। শীতকালীন সময়ে যা ১১০ হেক্টর ছাড়িয়ে যায়। এটা অবশ্যই ভালো লক্ষণ, বিষয়টা অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদের জন্য অনুকরণীয়।”