দেশজুড়ে

চাঁদা না পেয়ে পাহাড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নের প্রতিবাদ  জানিয়েছে পিসিসিপি

  প্রতিনিধি ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৭:২১:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

চাঁদা না পেয়ে পাহাড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নের প্রতিবাদ  জানিয়েছে পিসিসিপি

চাঁদা না দেওয়ায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ৪ উপজেলায় বেসরকারি ১টি মোবাইল ফোন কোম্পানির ২১টি টাওয়ারে হামলা চালিয়ে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করেছে পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্রধারী প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সন্ত্রাস বিরোধী ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটি।

৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার)  সকালে পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাবীব আজম এক যৌথবিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানান।

পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসী হামলায় পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির ২১ টি মোবাইল টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় বর্তমানে কোম্পানিটির কয়েক লাখ গ্রাহক চরম বিপাকে পড়েছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক কাজকর্মে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে।

গত ২২ জানুয়ারি ভোররাতে,  খাগড়াছড়ি জেলার  দীঘিনালা, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গায উপজেলায় ১১টি মোবাইল টাওয়ারের পাশাপাশি রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টি টাওয়ারে সমন্বিত হামলা চালিয়ে  ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সার্ভার রুম ভাঙচুরসহ টাওয়ারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু যন্ত্রপাতিও লুট করে নিয়ে যায়। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে মোবাইল টাওয়ার সংযোগ পুনঃস্থাপন করলেও ২/৩ দিনের ব্যবধানে সমস্ত টাওয়ারে আবারও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মিটার ভাংচুর ও লুটপাট করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। এতে ওইসব এলাকার  নেটওয়ার্ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়াসহ তাদের নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে স্থানীয় জনগণ।

উল্লেখ্য যে,  পাহাড়ের তথা-কথিত উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে চাঁদা হিসেবে প্রতিমাসে ৭০ লাখ  টাকা পরিশোধ করে কোম্পানীটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি চাঁদা দাবীর পাশাপাশি এককালীন ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।

এতে কোম্পানি এ বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীরা রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর ও খাগড়াছড়ি জেলার সদর, দীঘিনালা, মহালছড়ি, পানছড়িসহ কয়েকটি এলাকায় সর্বমোট ২১টি টাওয়ারের লাইন কেটে দেওয়া, ব্যাটারি লুট করা ও জেনারেটর পুড়িয়ে দেয়। এতে করে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মোবাইল কোম্পানী রবি ও তার অংশীদার প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিরাপত্তার জন্য অশনি সংকেত।

প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চুক্তি বিরোধী আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ এতো পরিমাণ চাঁদা দাবি করে না পেয়ে ২১টি টাওয়ার নষ্ট করে দিয়েও ক্ষান্ত হয়নি । নির্ধারিত সময়ে চাঁদা পরিশোধ না করার ফলে গত ৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) বিকেলে রাঙামাটি থেকে টাওয়ার ঠিক করতে যাওয়া পাহাড়ি সম্প্রদায়ের এক টেকনিশিয়ানকেও তুলে নিয়ে গেছে ইউপিডিএফ।  রবি’র টেকনিশিয়ান অপহরণ করার মাধ্যমে হিংস্রতার পরিচয় দিল ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীরা।

বিবৃতিতে  নেতৃবৃন্দ বলেন, বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিটির একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীরা সম্প্রতি টাওয়ার অপারেটরদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছে। তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হলে তারা টাওয়ারে হামলা চালায়। বর্তমানে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো মোবাইল কানেক্টিভিটি ছাড়াই রয়ে গেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, দাবি মানা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকায়ও এ ধরনের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এই চলমান চাঁদাবাজি এবং হুমকি মোবাইল টাওয়ার অপারেটরদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।

এই ঘটনা শুধুমাত্র পাহাড়ি অঞ্চলে শান্তি,  শৃংখলা ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্নই করে না, বরং চাঁদাবাজি ও সহিংসতার হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল অবকাঠামোকে কাজে লাগানোর একটি বিপজ্জনক নজিরও স্থাপন করেছে— এমনটাই দাবি করছে পিসিসিপি’র নেতৃবৃন্দরা।
এতবড় একটি সন্ত্রাসী ঘটনায় সকল সচেতন  মহল ও সুশীল সমাজ নামধারী চেতনা বাজরা নীরব থাকায় ধিক্কার জানিয়েছেন পিসিসিপি।

চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ পাহাড়ে অস্থিতিশীল, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তাই পিসিসিপি’র নেতৃবৃন্দরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানান, ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় পিসিসিপি পাহাড়ের সকল সন্ত্রাসী বিরোধী ছাত্র-জনতাকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অচল করে দিবে।

আরও খবর

Sponsered content