প্রতিনিধি ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৫:৩৫:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ২০১৮ সালে ১৫ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া আলহাজ জুট মিলস লিঃ বর্তমানে চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। দীর্ঘদিন মিলটি বন্ধ থাকায় এর গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে মিলের মূল্যবান মালামাল চুরির ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে বন্ধ হওয়া কারখানাটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন চাকুরীহারা শ্রমিক ও এলাকাবাসী। বর্তমানে মিলটি রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্বে রয়েছেন মাহবুবুর রহমান মাফু ও মোহাম্মদ আলীসহ তিনজন কর্মচারী। তারা মিলটি বন্ধ হওয়ার পর থেকেই বিনাবেতনে মিলটি দেখাশুনা করে যাচ্ছেন। এতবড় মিল তিনজনে পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। আবার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ। সন্ধ্যা হলেই চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে চোখের আড়ালে বিভিন্ন সময় মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। ওয়াল পার হয়ে জানালা ভেঙে মেশিনের পিতলের বভিন কেরিয়ার, ফ্যান, মটর, ইলেক্ট্রিক তার সহ মুল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
মিল ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মাইজবাড়ি-দিয়ারকৃষ্ণাই এলাকায় আলহাজ্ব জুট মিলটি স্থাপিত হয়। এ মিলে পাটের তৈরি বস্তা, ব্যাগ ও কার্পেটের সুতা প্রস্তুত করা হতো। গড়ে দৈনিক প্রায় ১৫ মেট্রিক টন পণ্য উৎপাদন হতো। সেখানে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। প্রায় ১৫ কোটি টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে অর্ধশত বছরের প্রাচীন আলহাজ্ব জুট মিল ২০১৮ সালে ২০ জুলাই হটাৎ বন্ধ ঘোষণা করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এক সময়ে পাটশিল্পের জন্য দেশের ‘দ্বিতীয় ড্যান্ডি’ হিসেবে খ্যাত এ প্রতিষ্ঠানটি হটাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে মিলটি বন্ধের প্রতিবাদ ও পুনরায় চালুর দাবিতে গত ৭ বছর যাবত দফায় দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে আসছেন শ্রমিক ও স্থানীয়রা।
মিলের নিরাপত্তা প্রহরী মাহবুবুর রহমান মাফু জানান, মালিকপক্ষ বেতন না দেওয়ায় অনেকেই চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এখনো বিনা বেতনে রয়েছি। এত বড় মিলে মাত্র তিনজনে পাহারা দেয়া সম্ভব না। মিলের একদিকে খোজ নিতে গেলে অন্য সাইড দিয়ে প্রবেশ মূল্যবান যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে দূর্বত্তরা।
উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বুলবুল ও শ্রমিক বাবর আলী, সেলিম ফকির সহ অনেকেই জানান, আ.লীগের শাসন আমলে থেকে মিলটি বন্ধ হয়ে পড়েছে। এখনও আমরা শ্রমিকরা মিলটি চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। মিলের ভিতরে কোন সিকিউরিটি গার্ড ও বিদ্যুৎ না থাকায় মালামাল এখন চুরি হচ্ছে দিনের পর দিন। এভাবে চুরি হতে থাকলে কখনই আর মিলটি চালু হবে না। মিলটি রক্ষায় প্রশাসনের শুদৃষ্টি কামনা করেন শ্রমিক ও স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় জুট মিলের মালিকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জানা যায়, মিল মালিক মো. হারুন-অর রশিদ দেশের বাহিরে রয়েছেন।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার (ওসি) মো. চাঁদ মিয়া বলেন, ‘যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় মিলের দায়িত্বে থাকা একজন থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।