প্রতিনিধি ৬ মার্চ ২০২৫ , ৩:৪৩:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরিষা ও গম চাষের পাশাপাশি বিকল্প ফসল হিসাবে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহায়তায় চর প্রকল্পের আওতায় ১৪টি প্রদর্শনিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। এটি দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনই বাণিজ্যিক লাভজনক হতে পারে বলে আশা করছেন এ সকল চাষিরা। এদিকে ফুলের বাগান দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক দর্শনার্থীরা আসছেন। ফুলের সৌন্দর্যে মহিত হয়ে অনেকে ছবি তুলছেন। ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিকল্প পদ্ধতি ও অধিক লাভের আশায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন কৃষকেরা। সূর্যমুখী চাষে কম খরচে অধিক ফলন ও লাভবান হওয়া যায় বলে জানান তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখী ফুলের তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ভিটামিন ’এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল। এবারে উপজেলায় প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের চরে চর প্রকল্পের আওতায় ১৪ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের ১৪টা প্রদর্শনি রয়েছে। এসকল কৃষকদের প্রনোদনা হিসাবে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া সূর্যমুখী চাষিদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের বিাভন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সূর্যমুখী ফুলের বাগানের পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। সারাদিন জমিতে কাজ করছেন ফুল চাষিরা। এসব এলাকায় সূর্যমুখী চাষে বদলে গেছে আশেপাশের দৃশ্যপট। দৃষ্টিনন্দন হলদে সূর্যমুখী বাগানের ফুলগুলি যেন সূর্যের দিকে তাকিয়ে হাসছে। সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক দর্শনার্থীরা আসছেন। ফুলের সৌন্দর্যে মহিত হয়ে অনেকে ছবি তুলছেন। ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিকল্প পদ্ধতি ও অধিক লাভের আশায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন কৃষকেরা। সূর্যমুখী চাষে কম খরচে অধিক ফলন ও লাভবান হওয়া যায় বলে জানান তারা।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তার গোড়াইপিয়ারের চরের বকুল মিয়া বলেন, এবারে প্রথম উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। ফলন ঘরে উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে প্রায় ২ হাজার টাকা। মোট খরচ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৭ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ফলন যে ভাবে হয়েছে তাতে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র চরের আফতাবগঞ্জ এলাকার সূর্যমুখী চাষি ওসমান গনী, নুরহেসেন ও মকবুল মিয়া সহ আরও অনেকে বলেন, ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিকল্প পদ্ধতি ও অধিক লাভের আশায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এছাড়া সূর্যমুখী চাষে কম খরচে অধিক ফলন ও লাভবান হওয়া যায় বলে জানান তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেরুল ইসলাম বলেন, সূর্যমুখী ফুলের তেল স্বাস্থ্যসম্মত ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ তেলের ব্যবহার বাড়ানো গেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমবে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, সূর্যমুখী ফুলের চাষ কৃষকদের নিকট জনপ্রিয় করতে চরাঞ্চলে চর প্রকল্পের আওতায় ৩৩ শতক করে পতিত জমিতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনি দেয়া হয়েছে। এ সকল কৃষকদের প্রনোদনা হিসাবে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। সূর্যমুখীর ফলন অনেক ভালো হওয়ায় চরাঞ্চল গুলোতে ব্যাপক সারা পড়েছে। তিনি আশা করছেন আগামিতে অনেকেই সূর্যমুখীর চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হেসেন জানান, সূর্যমুখী ফুলের চাষ একটি লাভজনক ফসল। সূর্যমুখী ফুলের তেল অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ভিটামিন ’এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল। সূর্যমুখী ফুলের তেল স্বাস্থ্যসম্মত ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করার জন্য উদ্বোদ্ধ করা হচ্ছে বিভিন্ন এরাকার কৃষকদের।