চট্টগ্রাম

বেগমগঞ্জে এবার বিবস্ত্রের ভিডিও ভাইরাল, প্রায় দুই মাস নিখোঁজের ঘটনায় মামলা

  প্রতিনিধি ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৭:৫৭:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

দিদারুল আলম,নোয়াখালী প্রতিনিধি :

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এবার এক মাদ্রাসা ছাত্রীর বিবস্ত্রের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে একাধিকবার অপহরণ করে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে। সর্বশেষ গত দুই মাস পূর্বে অপহরণ হলেও এখনও নিখোঁজ ওই ছাত্রী। এ ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে থানা, গ্রেপ্তার হয়েছে দুই আসামী।

২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা। রুমালে চেতনানাশক ওষধ শুঁকিয়ে মাকে অচেতন করে তুলে নিয়ে যায় মাদ্রাসা ছাত্রী ছায়েমা আক্তারকে। অভিযোগ বেগমগঞ্জের আলায়াপুর ইউনিয়নের হিরাপুর গ্রামের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ইমন ও রাসেলের বিরুদ্ধে। প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনও মেয়ের সন্ধান পায়নি মা। মেয়েকে ফিরে পেতে ইমনের ধারস্ত হলে উল্টো মাকে প্রস্তাব দেয় ইমনের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার।

অভিযোগ, ২০১৮ থেকে ইমন, রাসেলদের উত্যক্তের শিকার হতো তার মেয়ে। অভিভাবকদের জানালে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ওই বছরের ১৩ মার্চ রাত ২টায় কৌশলে ঘরে ডুকে সন্ত্রাসীরা। মাকে চেতনানাশক খাইয়ে অস্ত্রের মুখে মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। পরে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে তুলে এনে তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মেয়ের সঙ্গে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। কাউকে বললে চিরতরে শেষ করে দেয়ারও হুমকি দেয় তারা। জীবন হারানোর ভয়ে মুখ না খুলে আরো ভয়াবহতার শিকার তারা। এবার কয়দিন পর পরই অস্ত্রধারীরা হানা দিত তাদের ঘরে। এভাবে কয় দিন পর পরই ঘরে ডুকে ধর্ষণ করে যেতে সেই ছাত্রীকে।

সন্ত্রাসীদের এমন বিভৎসতা ও নৃশংসতা থেকে বাঁচতে বিয়ে দেয়া হয় ওই ছাত্রীকে। কিন্তু তাতেও খ্যান্ত হয়নি সন্ত্রাসীরা। বাড়িতে বেড়াতে আসলে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর দুপুরে তাকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ঢাকায় আটক রেখে চালানো হয় নির্যাতন। প্রায় তিন মাস পর ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ফিরিয়ে আনে মেয়েকে। এবাও বাড়িতে হানা দিয়ে চালানো হতো ধর্ষণ। আবারও ২০২০ সালের ২০ জুন তুলে নিয়ে যায় তারা। ১৫দিন পর পুনরায় টাকা দিয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে আনা হলেও ফের বাড়িতে ডুকে বার বার ধর্ষণ। এ যেন ভিন্ন কোনো বর্বর দেশ। শেষ তুলে নেয়া হয় ২৪ ডিসেম্বর ২০২০। আর ফিরে পাওয়া হয়নি। এবার আর জীবন কিংবা ইজ্জতের চিন্তা না করে আশ্রয় নিয়েছে পুলিশের। চারজনের নাম উল্লেখ করে করা হয়েছে মামলা। যদিও ২০২০ সালে একবার অভিযোগ করেও পুলিশের কোনো সহযোগিতা পায়নি তারা। অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান-মেম্বারকে জানালেও প্রতিকার মেলেনি।

ইমন-রাসেলদের অত্যাচারে শুধু এ পরিবারটি নয়, অত্যাচারিত হয়ে আসছে স্থানীয়রা। চেয়ারম্যান-মেম্বারও বলছে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা। এদের প্রত্যেকের নামে রয়েছে মামলাও। তবুও কিভাবে একের পর এক বিভৎসতার জন্ম দিচ্ছে তারা। এর সঠিক তথ্য নিশ্চিই তদন্ত করে বের করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে তাদের এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগিদের।

পুলিশ বলছে, বিষয়টি তাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা। অল্প সময়ের মধ্যেই মূল হোতা দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদ্রাসা ছাত্রীকে উদ্ধারে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিমও ।

মাত্র কয়েক মাস পূর্বের বেগমগঞ্জের একলাশপুরের ঘটনা এখনও ভুলেনি দেশের মানুষ। তার রেশ কাটতে না কাটতে নতুন আরেক নির্মমতার দৃশ্য সভ্যতার সম্মুখে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়ার পরামর্শ বিশিষ্টজনদের। না হয় চরম মূল্য দেয়ার শংকা তাদের।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by