Uncategorized

ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামে-গঞ্জে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ধামের গান

  প্রতিনিধি ১৩ অক্টোবর ২০২২ , ৭:২৩:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

আসাদুজ্জামান শামিম, ঠাকুরগাঁও: ধামের গান আদতে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় অঞ্চলের স্থানীয় লোকনাট্যের একটি ধারা যা কালের গর্ভে এখনও হারিয়ে যায়নি। এ লোকনাট্য ধারাটি এই অঞ্চলের গ্রামীণ জীবনে সকল ধর্মের সকল বয়সের সাধারণ মানুষের বিনোদনের এক নির্মল উৎস। হেমন্তের শেষ দিকে শুরু হয়ে শীতের শুরু পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে শত বছরের প্রাচীন এ লোকনাট্য গানের আসর বসে। এবছরও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কাশিডাঙ্গা লক্ষিরধামে বসেছে ধামের গানের আসর। পাশাপাশি আরও অনেক এলাকায় ধামের গানের আসর বসেছে বলে জানা যায়।

এরই ধারাবাহিতায় এবছরও ধামের গানে আয়োজনে মেতে উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ। রাতভর চলা মনমাতানো এই আয়োজনে ভিড় করে তৈরি হচ্ছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। যন্ত্রীরা সাধারণত মঞ্চের মাঝখানে গোল হয়ে বসে ঢোল, খঞ্জনি, একতারা, খোল, বাঁশি, হারমোনিয়ামের শব্দে মুখরিত হচ্ছে পুরো এলাকা। অনেকটা সৌখিনতার স্বাদে জমকালো ভাবেই আয়োজন হয় এই ধামের গান উৎসব। রঙ-বেরঙের কাপড় টাঙ্গিয়েও মাটির উঁচু ঢিবির চারপাশে বাঁশের ঘের দিয়ে বানানো হয় মঞ্চ। সেখানে রাতভর অভিনয় সহকারে গান গাওয়া হয়। পালাগুলোর ব্যাপ্তি গল্পভেদে কয়েক ঘণ্টা হয়ে থাকে। একরাতে তিন-চারটি পালা অনুষ্ঠিত হয়। একেকটি দল এসে একেক পালা পরিবেশন করে। কোন কোন আসর সপ্তাহব্যাপী চলে। ধামের গান উপলক্ষে জন সমাগম কিছুটা লোকজ মেলারও আকার ধারণ করে।

দৈনন্দিন জীবন যাপনের নানা উপকরণ নিয়েই এর গল্প ও গান তৈরি হয়। প্রান্তিক কিংবা সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখ, সাংসারিক জটিলতা, প্রেম, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অবহেলা, দুশ্চরিত্রের লাম্পট্যসহ যাবতীয় বিষয়াদি অত্যন্ত সরল সহজভাবে উঠে আসে এসব গানের মাধ্যমে। জটিল বিষয়গুলোকেও হাস্যরসের মাধ্যমে চিত্তাকর্ষক করে তোলা হয় অভিনয়ের মাধ্যমে।

ধামের গানের শিল্পীদের তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ থাকে না। এরা আহামরি কোন পেশাদার অভিনেতাও নন। অত্যন্ত চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে এরা বর্গাচাষি, দিন মজুর, ভ্যানচালক, রাজমিস্ত্রীর জোগালি ইত্যাদি সাধারণ পেশার লোক। এসব গানের আসরের কোন পান্ডুলিপিও হয় না, থাকে না যাত্রাপালার বা মঞ্চ নাটকের মতো কোনো প্রম্পটার। প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনাবলী থেকেই নেওয়া হয় চরিত্রগুলো। ধামের গান পরিবেশিত হয় আঞ্চলিক ভাষাতেই। এর বিষয়বস্তু হল প্রতিদিনের চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ এবং তা খুবই জীবন্ত ও সাহিত্যিক মারপ্যাঁচ শূন্য। এ কারণে এতদঞ্চলে ধামের গানের আসক্তি ও জনপ্রিয়তা অন্য সব লোকনাট্য থেকে অনেক বেশি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কাশিডাঙ্গা লক্ষিরধামে একটি ধামের গানের আয়োজনে গেলে কথা হয় বেশ কয়েকজন শিল্পীর সাথে। তারা জানায় ধ্বংস পরাম্পরায় তারা এ কাজ করে আসছে। তাদের বাপ-দাদাও ধামের গানের শিল্পী ছিলেন। বাবার হাত ধরেই শিশুকালেই তারা এটার সাথে জড়িয়ে গেছেন। অনেকেই সখের বসেই এই পেশায় নিজেকে জড়িত রেখেছেন। এই পেশা তেমন লাভজনক না। কারণ আয়োজকরা অল্প বাজেটে কোন রকমভাবে এসব আয়োজন করে থাকে। শিল্পীরা তেমন পারিশ্রমিক পায় না। তারা বলেন, শুধুমাত্র শিল্পটাকে ভালবাসা থেকে নিজস্ব খরচেই মাঝে মাঝে এসব আসরে আসে থাকি আমরা। সারা বছর অন্য পেশায় থাকলেও এই সময়ে আমরা ছুটে আসি এক অদ্ভুত নেশায়।

আরও খবর

Sponsered content