রংপুর

অব্যাহত শৈত্য প্রবাহ চরম বিপাকে দিনাজপুরের পৌনে ৮ লাখ শ্রমিক

  প্রতিনিধি ১১ জানুয়ারি ২০২৩ , ৬:৩৪:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

সাহেব আলী, দিনাজপুর :

অব্যাহত শৈত্য প্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরসহ দেশের উত্তর জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দিনাজপুর জেলার প্রায় পৌনে ৮ লাখ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দিনাজপুরে গতকাল বুধবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অব্যাহত শৈত্য প্রবাহ আর হাড় কাঁপানো তীব্র শীতে চরম বিপাকে পড়েছে দিনাজপুর জেলার দিনে এনে দিনে খাওয়া নিম্ন আয়ের প্রায় পৌনে ৮ লাখ শ্রমিক। তীব্র শীতে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না এসব শ্রমিক। অনেকে জীবন ও জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে বের হয়েও কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। গতকাল সকাল ৯টায় শ্রমিকের হাট হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর শহরের ষষ্টিতলায় হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বসেছিলো সত্তরোর্ধ বয়স্ক শ্রমিক লোকমান আলী। এই বয়সেও জীবিকা নির্বাহ করেন ঘরের ছাউনির কাজ করে। বাড়ি বিরল উপজেলার দামাহার গ্রামে। সকালে দীর্ঘ ৪ মাইল পথ হেঁটে এসেছেন ষষ্টিতলায় কাজের সন্ধানে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ষষ্টিতলায় এসে বসে কাঁপছেন থরথর করে। তার সাথে কথা বলতে গিয়েই জানালেন, ছেলে সন্তান নেই। দুই মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর এখন বাড়িতে শুধু বুড়ো আর বুড়ি। একদিন কাজ না করলে বাড়িতে চুলা জ্বলে না। তাই তীব্র শীত উপেক্ষা করে এসেছেন কাজের সন্ধানে। হাতে নিয়ে এসেছেন বাজারের ব্যাগ। তিনি জানালেন, এই ঠান্ডাটার হামার নাহে বারে, এইটা বড়লোকের। এই ঠান্ডাত বাড়িত বসি থাকিলে হামার পেট চলিবে? তিনি জানান, কয়েকদিন থেকে প্রচন্ড শীতের কারণে কাজ পাচ্ছেন না। ৫ দিন থেকে ষষ্টিতলায় এসে ঘুরে যাচ্ছেন। ধারদেনা করে কোনমতে জ্বালাচ্ছেন সংসারের চুলা। আর কয়দিন এরকম আবহাওয়া চলবে এমন শংকায় রয়েছেন তিনি।
একই রকম কথা জানান, ষষ্টিতলায় কাজের সন্ধানে বসে থাকা বিরল উপজেলার দামাইল গ্রামের ৭৫ বছর বয়স্ক শ্রমিক সামসুল ইসলাম, বহলা গ্রামের ৬৫ বয়স্ক শ্রমিক মাহাবুব, ধামাহার গ্রামের ৬৯ বছর বয়স্ক শ্রমিক মজিবর, বিরলের মকলেশপুর গ্রামের ৬২ বছর বয়স্ক শ্রমিক আজিজুর। তীব্র শীতের কারণে চরম দুর্ভোগের কথা বর্ণনা করেন তারা।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে জেলায় ৬ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৪ জন কৃষি শ্রমিক, ৮২ হাজার ২১৭ জন শ্রমিক এবং ৫৫ হাজার ৩৬৪ জন পরিবহন শ্রমিক। প্রতিদিন আয় করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় এসব শ্রমিকের। অব্যাহত শৈত্য প্রবাহ আর তীব্র শীতের কারণে জীবন ও জীবিকা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের এসব শ্রমজীবি মানুষ। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, বুধবার পর্যন্ত সাত দিন ধরে ৯ এর ঘরে। বাতাসের আর্দ্রতা ও গতি বাড়ায় এবং ঠিকমতো সূর্য না ওঠায় কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। বুধবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরও খবর

Sponsered content