প্রতিনিধি ১ জুলাই ২০২০ , ৮:১২:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
এমদাদুল হক, শ্রীপুর (গাজীপুর): ১৪ বছরের কিশোরী আসমা খাতুন। এই বয়সে দুরন্ত কিশোরীপনায় যার সময় অতিবাহিত করার কথা ছিল সে সুযোগটি হারিয়েছে, সে দারিদ্রতার অভিশাপে। বছর জুড়েই তার ভাগ্যাকাশে ছিল কালো মেঘের আনাগোনা। শরীরে অসংখ্য পোড়া ঘাঁয়ের ক্ষতচিহৃ, দীর্ঘ এক বৎসর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কবলে পড়ে কৈশোরীপনা যেন তার আর অবশিষ্ট নেই। অমানুষিক নির্যাতনের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েও তার মুখে গত দুদিনেও ফুঁটেনি কোন হাঁসি। বিভৎস্য সেই নির্যাতনের কথা মনে হলেই কখনও ঢুকরে কেঁদে উঠছেন আবার কখনও সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিসম্পাত করছেন এই কিশোরী। তার কাছে মানুষের সংজ্ঞাটাও এখন আর অবশিষ্ট যে নেই। কেননা এই কিশোরী যে জীবিত থেকেও অনেকটা মৃত অবস্থায়।
গাজীপুরে শ্রীপুরে গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর(নয়নপুর) গ্রামের হত দরিদ্র কৃষক ইমান আলীর কিশোরী কন্যা আসমা আক্তার। বাড়ির পাশেই ফারসিং নীট কম্পোজিট কারখানার মালিক আবু তাহের মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতনে প্রতিশ্রæতি দিয়ে কাজে নেন তাহের-শাহজাদী দম্পতি। কিন্তু বাসায় কাজের লোক হিসেবে কয়েকমাস অতিবাহিত হওয়ার পর নেমে আসে মেয়েটি উপর অমানুষিক শারিরীরিক র্নিযাতন। এমনকি খাবারও দিতেন না। মাসিক বেতন দিতেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। কারখানার মালিক আবু তাহের তার নিজ বাসায় গৃহকর্মীর কাজে নিয়ে ছিলেন। মেয়েটির বাবা ইমান আলী জানান, উত্তরার ৩নং সেক্টরের ৭/বি রোডের ৩১ নং বাসায় কাজ করতেন আসমা। কথা দিয়েছিলেন মেয়ের মতো করে রাখবেন। সে কথা তারা রাখেননি উপরোন্ত শারীরিক ও মানসিক আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছেন আসমাকে।
নির্যাতনের শিকার কিশোরী আসমা বলেন, প্রথম থেকেই তাকে সারা দিন ও সারা রাত সমান করে কাজ করতে হতো। ঘুমানোর সময় পর্যন্ত দিত না। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়লেই মিলতো নির্যাতন। কখনও দিনে ১ ঘন্টার সময় পর্যন্ত ঘুমানোর জন্য দিত না। বাড়ীর মালিক আবু তাহের মাঝে মধ্যেই কিল ঘুষি দিয়ে নির্যাতন করতেন এই কিশোরীকে। কয়েকবার সিগারেটের আগুনের ছেকাও দিয়েছেন। মালিকের স্ত্রী শাহজাদীও শরীরে দিতেন গরম তেলের ছিটা। তারপর দগ্ধ ঘাঁয়ের উপর মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দিতেন। এমন ভাবে দীর্ঘ চার মাস ধরে এই কিশোরীর উপর চলে নির্যাতন। মাঝে মধ্যে নির্যাতন এমন ভাবে চলতো যে, তার চেতনা চলে যেত। তার উপর এমন নির্যাতনের কারনে সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ীর মালিক আবু তাহের গাড়ীর চালকের মাধ্যমে তার হাতে ৫শত টাকা দিয়ে গত ২৯জুন বাড়ীতে পৌছে দেয়।
কিশোরীর মা জোৎ¯œা জানান, দারিদ্রতার কারনে দুমুঠো ভাত দিতে পারতাম না, লেখাপড়াও করাতে পারছিলাম না। এমন অবস্থায় শিল্প মালিকের বাসায় কাজে দিয়েছিলাম, আশা ছিল অন্তত পক্ষে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে। কিন্তু এখন আমার মেয়েকেই যে নির্যাতন করে প্রায় শেষ করে দিয়েছে। গত ১ বৎসরে তার মেয়েকে দেখতে দেয়নি তারা। মুঠোফোনেও বাড়ীতে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এমন অবস্থায় তার মেয়ের উপর নির্যাতনকারীদের শাস্তি দাবী করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, তার মেয়ে বাড়ীতে আসার পর গৃহকর্তী শাহজাদী কয়েকবার ফোনে হুমকী দিয়েছেন যাতে আমরা বাড়াবাড়ি না করি। অন্যথায় নানাভাবে হেনস্থা করার কথাও বলেছেন। আমরা এখন ভয়ে আছি তাই মেয়ে আসমাকে এক স্বজনের বাড়ীতে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
ফারসিং নীট কম্পোজিট কারখানার মালিক আবু তাহের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার কারখানায় গেলেও সেখানকার কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দেয়নি।
শ্রীপুর থানার অফির্সাস ইনর্চাজ (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন জানান, যেহেতু ঘটনাস্থলটি উত্তরায় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় আইনী সহায়তা নেয়ার জন্য পরার্মশ দেয়া হয়েছে।