রংপুর

ধানের বাজার মূল্য কম থাকায় ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

  প্রতিনিধি ২৩ মে ২০২৪ , ৬:০৯:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

ধানের বাজার মূল্য কম থাকায় ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

ধানের জেলা দিনাজপুরে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকদের মুখে। উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারমূল্য কম থাকায় বোরো আবাদ করে এবার এক প্রকার লোকসানের মুখে পড়েছে প্রান্তিক কৃষকরা। কৃষকরা জানান, বাজারে দাম না বাড়লে এবার বোরো আবাদ করে চরম লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।

বুধবার দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর ফার্ম হাটে বিআর-৮৮ জাতের ১০ বস্তা (প্রতি বস্তা ২ মন) ধান বিক্রি করতে আসেন পাশ^বর্তী বিরল উপজেলার আজিমপুর গ্রামের কৃষক বিধান চন্দ্র রায়। হাটে প্রতিবস্তা ধান বিক্রি করেন ১ হাজার ৯’শ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতিমন ৯৫০ টাকা দরে। তিনি জানান, এই দামে ধান বিক্রি করে কোনোমতে উৎপাদন খরচ উঠছে।

কিন্তু লাভের দেখা মিলছে না। কৃষক বিধান চন্দ্র রায় জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন তিনি। প্রতিবিঘা ধানের উৎপাদন খরচের হিসাব কষে তিনি জানান, জমি চাষ, চারা রোপণ, নিড়ানি, সার ও কীটনাশক, সেচ ও কাটা-মাড়াই বাবদ এবার খরচ পড়েছে প্রায় ২৮ হাজার টাকা। আর প্রতিবিঘা জমির বর্গা বাবদ জমির মালিককে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। এতে প্রতিবিঘায় তার উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার টাকা।

তিনি জানান, প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ৪০ মণ ধান। বাজারের বর্তমান মূল্য অনুযায়ী এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে তিনি পাচ্ছেন ৩৮ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খরচই তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই কম দামে ধান বিক্রি করে বেশী দামে চাল কিনে খেতে হয় তাদের। কৃষকরা ধানের প্রকৃত দাম পায়না। কৃষকের ধান কিনে লাভ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। শুধু এই এলাকা নয়, দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বোরো আবাদের জন্য এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে।

কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং সেই তুলনায় বাজারে দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের। দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার বড় গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমি সাধারণ কৃষক। মানুষের কাছে বর্গা নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে বোর ধান লাগিয়েছি। আল্লাহর রহমতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানের যে বাজার তাতে গায়ে গায়ে যায়, লাভ নাই। এক বিঘা জমি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা নিয়েছি, এরপর হাল চাষ, ধানের বীজ, পানি, সার কীটনাশক সব কিছুর যে দাম তাতে এদিকে খরচ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন ৪০ মণ।

বর্তমান ধানের বাজারে ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা মণ। তাহলে লাভ কোথায় ধান চাষ করে। আউলিয়া পুকুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ৬ বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধান লাগিয়েছি। তার মধ্যে ৪ বিঘা জমির ধান কাটছি ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ঝড় বৃষ্টি না থাকায় ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে ধানের বাজার খুব খারাপ এক বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আমার এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয়েছে ৪৫ মণ। এক মণ ধান বিক্রি করছি ৯৫০ দরে। তাহলে বলেন কয় টাকা লাভ থাকে।

বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম যে পরিমাণ বাড়ছে শুধু কৃষকের ধানের মূল্য নেই। কৃষক যদি না বাঁচে তাহলে তো দেশের অবস্থা বেহাল হবে।বুধবার নশিপুর ফার্ম হাটের ধান ক্রেতা বিভাকর বসাক জানান, দিনাজপুরে সবেমাত্র বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। মিল মালিকরা এখনও পুরোপুরি ধান কিনতে শুরু করেনি। এ কারণে বাজার কিছুটা কম।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, জেলায় এবার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চাইতে ৭১০ হেক্টর বেশি। এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন (চালের আকারে)।

আরও খবর

Sponsered content