রংপুর

উলিপুরে শাক ও সবজি চাষে আয় করছেন চাষিরা

  প্রতিনিধি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩:৩২:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে শাক ও সবজি চাষে আয় করছেন চাষিরা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিভিন্ন ধরনের শাক ও সবজি চাষে রঙের বাহার ছেঁয়ে গেছে টাপুর কুটি এলাকা। বিভিন্ন বাহারী রংয়ের শাক ও সবজি বাণিজ্যিক ভাবে রপ্তানি করে আয় করছেন শাক চাষিরা।

বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ দেখে মনে হয় রংধনুর সাত রঙ ভেসে উঠেছে জমি গুলোতে। বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ ছাড়াও নানান ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে এসব এলাকা গুলোতে। পারিবারিক ও এলাকার পুষ্টি চাহিদা পুরন করা ছাড়াও উপজেলা ও উপজেলার বাহিরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকেরিতে শাক ও সবজি নিতে আসেন ব্যাবসায়ীরা।

কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় রবি শস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫০ হেক্টর। এর মধ্যে শাক ও সবজি চাষও রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শাক চাষে অল্প সময়ে অল্প খরচে ভালো ফলন এবং বাজার দর ভালো থাকায় উপজেলায় শাক চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। কৃষি অফিস থেকে শাক চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে বলে জানান।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দক্ষিন দলদলিয়া ইউনিয়নের চারিদিকে ছড়া বেষ্টিত মাঝখানে উঁচু দ্বিপের মত টাপুরকুটি এলাকা একরময় একর জুড়ে বিভিন্ন ধরনের শাক ও সবজির চাষ করছেন। সেখানকার চাষিরা প্রতি মাসে একের পর এক বিভিন্ন ধরনের শাক ও সবজি চাষ করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন।। শাক ও সবজি চাষে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন।

তারা সেখানে লালশাক, কলমিশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, এছাড়া সবজির মধ্যে লাউ, সিম, বেগুন, মরিচ, বরবটি, শসা, করলা সহ বিভিন্ন ধরনের শাক ও সবজি চাষ করছেন। তারা জানান আমন ধানের থেকেও বেশি লাভ করা সম্ভব শাক ও সবজি চাষে। সেখানে উঁচু এলাকা হওয়ায় ১২ মাসের মধ্যে ১১ মাসেই শাক ও সবজি চাষ করছেন চাষিরা। টাপুরকুটি এলাকার শাক ও সবজি উপজেলা ও উপজেলার বাহিরে বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি হচ্ছে।

এসব এলাকার চাষিরা খরা রৌদ্রতাপে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী পুরষ মিলে শাক ও সবজি নিড়ানিতে এবং উঠাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা আরও বলেন, ধান চাষের চেয়ে সবজি চাষে দ্বিগুণ লাভ হয়। বেশি লাভ হবার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, প্রতিমাসে নতুন নতুন শাক চাষ করা সম্ভব। যা খরচের চেয়েও দ্বিগুণ লাভ হয়। বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় দেখা দিলে আমরা উপজেলার কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শের মাধ্যমে তা নিধন করে থাকি।

দক্ষিন দলদলিয়া টাপুরকুটি এলাকার শাক ও সবজি চাষি সাহেব আলী বলেন, এবারে ৫৫ শতক জমিতে শাক ও ৩৪ শতক জমিতে সবজির চাষ করেছি। ৫৫ শতক জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ করতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। শাক বিক্রি করলে আয় হবে ৩০ হাজার টাকা। যা ব্যায়ের চেয়ে লাভ বেশি। এভাবে বছরে ১১ মাস শাক চাষ হবে। তিনি আরও বলেন, এভাবে শাক চাষ করে বছরে আয় হবে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। যা রোপা ও আমন ধান চাষ করে এত টাকা লাভ করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
এছাড়াও টাপুরকুটি এলাকার শাক ও সবজি চাষিদের মধ্যে শহিদুর, এরশাদ, মোখলেছ, আবেদ আলী, নওয়াব, মতিয়ার ও কাইয়ুম সহ আরও অনেকে একই কথা বলেন।
উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের আজাদ মিয়া জানান, আমি প্রতিদিন পাইকেরিতে শাক ও সবজি কিনতে টাপুরকুটিতে আসি। এখান থেকে ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করে থাকি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, দক্ষিণ দলদলিয়া টাপুরকুটি আমার ব্লোকে শাক ও সবজি চাষে ব্যাপক সারা পড়েছে। এখানে সবজি চাষিরা বাণিজ্যিক ভাবে সবজি বিক্রি করে আয় করছেন। যে কোন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের টাপুরকুটি এলাকায় শাক ও সবজি চাষে ব্যাপক সারা পড়েছে। তারা বোরো ও আমন ধানের চাষ না করে দ্বিগুণ লাভের আশায় শাক ও সবজি চাষ করে থাকেন। এ সকল সবজি চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে দেয়া হয়ে থাকে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় সবজি চাষের বাম্পার ফলন হচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by