বাংলাদেশ

‘নিজে হাতে বাচ্চাদের নতুন বই দিতে পারলাম না’

  প্রতিনিধি ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ , ৬:৪৩:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বই বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। ছবি : বাসস

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার দুঃখ, আমি নিজে হাতে বাচ্চাদের হাতে নতুন বই দিতে পারলাম না। তবে সেজন্য করোনাই দায়ী।

তিনি বলেন, মহামারীর কারণে এবারও বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে বই উৎসব হবে না। উৎসব না হলেও ৪ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে যাতে শিক্ষার্থীরা বই পায়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ২০২১ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং একইসঙ্গে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে এই ফল প্রকাশ এবং উদ্বোধন করেন।

এবার করোনার কারণে ১ জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসব না হলেও সেদিন থেকেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ শুরু হবে এবং ভিড় এড়াতে একেক দিন একেক শ্রেণির বই প্রদান করা হবে। এবারে ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি বই বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক লাখ শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে পুষ্টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং দুই লাখ শিক্ষককে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর এই সমস্যা থাকায় লেখাপড়ায় সমস্যায় পড়তে হয়, যা অনেক সময় সকলের অগোচরেই থেকে যায়।।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমটা চালু রাখতেই হবে। কারণ, করোনা কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে। আমরা সবসময় লক্ষ্য করেছি শীতে এর প্রাদুর্ভাবটা বেড়ে যায়। কাজেই এখন থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেই প্রস্তুতিটা নিতে হবে। আর প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে স্কুলগুলো হয়তো চালু রাখা সম্ভব হবে না। সে কারণে, অনলাইন শিক্ষাটা যাতে প্রত্যেক ঘরে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, যেহেতু, দেশে এখন আর বিদ্যুতের সমস্যা নেই এবং এই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখায় তার সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। যাতে ঘরে বসেও মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। সংসদ টিভি এ কাজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবসময় ব্যবহার করতে পারবে।

তিনি এই করোনার মধ্যেও ফলাফল ঘোষণার সাফল্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষমন্ত্রণালয়সহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের জন্য সোনার মানুষ হবে আজকের শিক্ষার্থীরা, এজন্য তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যোগ্য নাগরিক আমাদের গড়ে তুলতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিনটা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলাফল ঘোষণা পাশাপাশি নতুন বছরের নতুন বই দেওয়া হচ্ছে। বই হাতে পাওয়ার আনন্দই আলাদা, নতুন বই মলাট লাগানো ও তাতে নাম লেখা, এটা অন্য রকম অনুভূতি।

তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যাতে পিছিয়ে না থাকে, তাদের উপযোগী করেও বই প্রস্তুত করে দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিজেদের ভাষায় বই তৈরি করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত আমরা তাদের পাঁচটি ভাষা পেয়েছি। সে ভাষায় বই করে দিয়েছি।

সরকারের টিকাদান কার্যক্রমের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের প্রথমে দিয়েছি, এখন শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি এবং ১২ বছর বয়স পর্যন্ত যারা তাদের সবাইকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনিহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকালই তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলে ব্যবস্থা নিয়েছেন সারা দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে যেন এই টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকে। একদম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও যেন দ্রুত টিকা নিতে পারে। কারণ, নতুনভাবে যাতে আবার সংক্রমিত না হয় সে ব্যবস্থা আমাদের এখন থেকেই নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি আহ্বান জানাবো আমরা এই টিকাদান কার্যক্রমটা একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেই দেয়া হবে  বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে দেয়া হবে। কিন্তু যারা টিকা নেন নাই এখনো তাদেরকে টিকাটা নিতে হবে।

পরিবারের শুধু অভিভাবক নয়, শিক্ষার্থীরাও যাতে টিকা নেয় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও খবর

Sponsered content