দেশজুড়ে

শ্রীপুরে লিচুর ফলন ভালো, ন্যায্য দাম না পাওয়া ও বিক্রি নিয়ে শঙ্কা

  প্রতিনিধি ১১ মে ২০২০ , ৭:৫২:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

0Shares

এমদাদুল হক, শ্রীপুর (গাজীপুর) : গাজীপুরের শ্রীপুরে এবছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে তবে বিক্রি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাগান মালিকেরা প্রতি বছর লিচু ফুল ফোটার পর পর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারী এসে লিচু বাগান কিনে রাখতেন এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে বেপারী না আসায় কীটনাশক স্প্রে করা, জমিতে পানি সেচ দেয়া, গাছে খুঁটি দেয়া, বাদুরপাখি থেকে রক্ষা পেতে বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে বাতি জ্বালানো, পাহাড়া দেয়াসহ নানা কাজে শ্রমিক সংকটেও ভুগছেন বাগান মালিকেরা

একই এলাকার বাগান মালিক আফাজ উদ্দিন বলেন, তার ছোট আকারের ৪৮টি লিচু গাছ রয়েছে ফুল ফোটার পরই নারায়ণগঞ্জের বেপারীদের কাছে লিচু বাগান বিক্রি করে দিয়েছেন বিক্রির সময় দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ছিল না কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব লকডাউনের ফলে বাইরের বেপারীরা এলাকায় আসছে না অনেক বাগান মালিক নিজেরাই কীটনাশক প্রয়োগ পাহাড়ার ব্যবস্থা করছেন এতে বাগান মালিকদের ভোগান্তি উৎপাদন খরচ বেড়েছে

উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি গ্রামের কায়সার মৃধা খোকন বলেন, তার তিন বাগানে দুই লিচু গাছ রয়েছে প্রতি বছর লিচুর মৌসুমে শুরু থেকে নারায়নগঞ্জ থেকে বেপারী (পাইকার) আসতে শুরু করে পছন্দমতো দাম হলে তাদের কাছে বিক্রি করে দিতাম লিচু লাল হওয়া পর্যন্ত তাদের নিজ উদ্যোগে বাগান পরিচর্যা করতো বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লকডাউনের কারনে বেপারী (পাইকার) আসতেছে না নিজেরাই বাগান পরিচর্যা করতেছি শেষ পর্যন্ত খরচ তুলতে পারবো কিনা শঙ্কায় আছি

বাগান মালিক নূরুল আলম বিএসসি বলেন, লিচুর ফুল ফোটার শুরুতে এলাকায় মধুর বাক্স নিয়ে মৌচাষীরা আসতেন তারা ফুল থাকাকালীন প্রায় ১৫ দিনের মতো মধু সংগ্রহ করতেন এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে লিচুর মধু সংগ্রহের প্রক্রিয়াটিও বাদ পড়েছে

অপর বাগান মালিক এনামুল হক আকন্দ বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এলাকায় বেপারী না আসলে নিজ উদ্যোগে বাগান মালিকদের ঢাকায় নিয়ে লিচু বিক্রি করতে হবে এতে উৎপাদন খরচ বা সঠিক মুল্য না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে

কেওয়া পশ্চিম পাড়ার আলমাছ উদ্দিন বলেন, তার বাগানে ৫০টি লিচু গাছ রয়েছে সাড়ে সাত লাখ টাকায় বাগান বিক্রি করেছেন তবে এবার জেলার বাইরের বেপারী আসেনি এলাকার বেপারীদের কাছে বিক্রি করেছেন দুই মাস আগে বিক্রির বায়না পেয়েছেন মাত্র ৬০ হাজার টাকা করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর বেপারী সময়মতো টাকা দিতে না পারা কথা জানিয়েছেন অন্যান্য বছর জেলার বাইরে থেকে বেপারী আসতেন লিচুর দামও ভাল পাওয়া যেত কোনো কোনো বাগান মালিক এবার শ্রমিকের অভাবে সঠিকভাবে সময়মতো ওষুধ স্প্রে এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যাও করতে পারেনি তারপরও ফলন ভাল হয়েছে

শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া (আকন্দ বাড়ি) গ্রামের নূরুজ্জামান আকন্দ জানান, তাঁর বাগানে ১৩টি বড় লিচু গাছ রয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর বাগানে লিচুর পরিমান বেশি বাগানে পানি সেচ, ফুল আসার আগে থেকে পর্যন্ত চার বার কীটনাশক প্রয়োগ, সার প্রয়োগ প্রয়োজনীয় পরিচর্যায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে করোনাকালে লিচু বিক্রির ভাল পরিবেশ না পেলে উৎপাদন খরচ উঠানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে

লিচু শ্রমিক ফারুক হোসেন বলেন, লিচু ফলনের চার মাস একটি গ্রামের বাগানগুলোতে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয় এবার করোনা পরিস্থিতি সম্ভাবনাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে বাগান মালিকেরা লিচুর ন্যায্য দাম না পেলে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধে হিমশিম খাবেন  

কৃষি কর্মকর্তা পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬১ কিলোক্যালরি শক্তি রয়েছে এটি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, ক্যান্সারের প্রবণতা হ্রাস করে এর মধ্যে ফাইবার, ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কর্ম রয়েছে এছাড়াও লিচুতে ভিটামিন সি সহ অন্যান্য খাদ্য শক্তি বিদ্যমান

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহবুবু আলম তাঁর কার্যালয় থেকে দেয়া তথ্যমতেগাজীপুর জেলায় প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে গত বছর ফলন হয়েছিল ২৬ হাজার ৮৮০ মে.টন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও গাজীপুরে লিচুর ফলন বরাবরই ভাল হয়ে থাকে এবারও তার ব্যাতিক্রম নয় তবে জেলার মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় লিচুর আবাদ সবচেয়ে বেশি

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম মুয়ীদুল হাসান তাঁর অফিস থেকে দেয়া তথ্যমতে, শ্রীপুরে ৭২৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে গত বছর উপজেলায় উৎপাদন হয়েছিল প্রায় চার হাজার মে.টন গত দুই বছর যাবত উৎপাদন ক্রমশ: বেড়েছে এবারও ফলন ভালো হয়েছে

তিনি জানান, শ্রীপুরের লিচু চাষীরা সচেতন তারা আগে থেকেই কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় পরিচর্যার বিষয়গুলো জেনে তা বাগানে প্রয়োগ করেন এবার ফলনও ভালো হয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে বাগান মালিকেরা কৃষি বিভাগ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকার বিভিন্ন আড়তে লিচু বিক্রি করতে পারবেন কৃষি বিভাগ ক্ষেত্রে সকল প্রকার সহায়তা করবে

0Shares

আরও খবর

Sponsered content