প্রতিনিধি ১৫ নভেম্বর ২০২৩ , ৭:১৭:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
১৫ নভেম্বর ২০০৭। এই দিনে সুপার সাইক্লোন সিডর আঘাত হানে বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে শরণখোলা ও মোরলগঞ্জে উপজেলায়। প্রকৃতি ও মানবতাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার উপজেলার প্রায় ৪৫০ বর্গকিলোমিটারের জনপদ। সিডরের জলোচ্ছাসে শরণখোলার বলেশ্বর নদের তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের নাজুক বেড়িবাঁধের তিনের দুই অংশই বিলিন হয়ে যায়। সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বিধ্বস্ত হয় হাজার হাজর ঘরবাড়ি ও গাছপালা। বিপর্যস্ত হয়ে পরে এখানকার অর্থনীতি। আজও চোখের জল থামেনি সিডরে নিহত ৯৩টি পরিবারের।
এর পর এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উঁচু ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহন করে সরকার। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) মাধ্যমে ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয় দুই দফায় আরো চার বছর। যার ফলে তিন বছরের কাজ শেষ হতে সময় লেগে যায় প্রায় ৭বছর। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ‘সিইআইপি’ কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করবে বলে জানা গেছে।
কিন্তু বালু খেকোদের গ্রাসে ডিসেম্বর ২০২৩এ আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের আগেই ধ্বসে যেতে শুরু করেছে বাঁধ । শরণখোলা মোরেলগঞ্জ এলাকার লাখো মানুষের স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে । একারনে উপকুলে আবারো আতংক বিরাজ করছে । বালু খেকোদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস জন প্রতিনিধিদের ।
সিডরের ১৬ বছর পূর্তিতে সাধারন মানুষের দাবী এই সকল বালু খেকোদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা।
এখনও দুঃসহ স্মৃতি আর বেদনায় জড়িয়ে আছে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। সিডর চলে গেছে কিন্তু এর স্মৃতি চিহ্ন আজও রয়ে গেছে বেচে থাকা মানুষের হৃদয়ে । প্রতিটি জনপদে সিডরের অগ্নিমূর্তির কথা মনে করে অনেকে এখনো আতকে উঠে। নিজের অগোচরে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করে দিয়েছিল সিডর। সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেশ্বর আর পানগুছি নদীর তীরবর্তী এলাকার ও শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের মানুষের। বলেশ্বর হয়ে পানগুছি হয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটে চলা মানুষ আর জীবজন্তুুকে।
বলইবুনিয়া ইউনিয়নের বৃদ্ধ নুর মোল্লা বানভাসি জলোচ্ছ্াস থেকে তার স্ত্রীকে ধরে রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেননি শেষ রক্ষা করতে স্ত্রী নেহেরু বেগমকে। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সিডরের জলোচ্ছাসে। বৃদ্ধ স্বামীকেও কেড়ে নিয়ে গেছে নিষ্ঠুর সিডর। পরের দিন স্ত্রীর কাপড়ের আঁচল ধরা স্বামীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের একমাত্র পুত্র সেলিম মোল্লা ও সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয় সে। এছাড়া সিডরে কেড়ে নিয়েছে নিষ্পাপ শিশু স্বাধীন (৯) কে। এরকম হাজারো করুন কাহিনি আছে এখানে। সিডরে ২১৬৫ হেক্টর জমির উফসি ফসল এবং ১২ হাজার ৭৮৮ হেক্টর জমির আমন ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। ৪২৩৫ টি পুকুর ও ৪১৭০ টি মৎস্য ঘের সম্পূর্ণরূপে ডুবে যায়। ১৩১ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও ১৫৮ টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবমিলিয়ে ১৯৩৭ টি পরিবারের বসত ঘর সম্পূর্ণ এবং ৪৩২২৬ টি পরিবারের বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।