খুলনা

ইউনিয়ন জুড়ে নার্সারি: সৃষ্টি হয়েছে শত শত বেকারের কর্মসংস্থান

  প্রতিনিধি ২৫ মে ২০২১ , ৭:৪৭:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

মোমিনুর রহমান মন্টু, ঝিনাইদহঃ

রফিকুল ইসলাম। তিন ভাই পাঁচ বোনের টানাপোড়নের সংসারে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করেই বেড়ে উঠা। ২০০২ সালে পরিবার থেকে আলাদা করে দেন বাবা। তখন আমার প্রথম সন্তান বড় মেয়ের বয়স এক বছরের মত। স্ত্রী মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে পরের জমিতে কাজ শুরু করি। কঠিন এই দুঃসময়ে এক প্রতিবেশি ১৭ কাঠা জমি দেন কৃষি কাজের জন্য।

ওই জমিতে বাবার দেওয়া ১৫০ টাকা দিয়ে কিছু ফলজ চারার বীজ কিনে নার্সারির কাজ শুরু করেন। দুই বছর পরিচর্যার পর চারা বিক্রি শুরু করেন। এখান থেকে আসা টাকায় আরো চারা ও বীজ কিনে নতুন নতুন চারা তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। এরপর ১৮ বছরের ব্যবধানে এখন মাঠে তার ৭০ বিঘা জমি। এরমধ্যে ১৫ বিঘা জমিতে রয়েছে নার্সারি। বাকি জমিতে নানা জাতের ফলজ গাছের আবাদ। এরমধ্যে নিজের কেনা জমি রয়েছে ৯ বিঘা, বাকিটা লিজ। রফিকুল ইসলামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তঘেষা গ্রাম চাপাতলায়।

তার দেখাদেখি চাপাতলা গ্রামে এখন আরো ১০ জন নার্সারি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তার গ্রাম নয়, একে একে সমস্ত ইউনিয়ন জুড়েই গড়ে উঠেছে নার্সারি। প্রতিটি গ্রামের ১০ থেকে ১৫ জন কৃষক এসব নার্সারি গড়ে শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর কৃষি ফার্ম দত্তনগর ফার্মের মধ্যে চলে যাওয়া পিচের রাস্তা ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলেই ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা ৪নং স্বরুপর ইউনিয়ন।

এটি একেবারে ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা ইউনিয়ন। যে দিকে তাকায় শুধু চারা গাছের নার্সারি আর ফলজ গাছের বাগান। পুরো ইউনিয়ন জুড়েই গড়ে উঠেছে এমন নার্সারি। ১৩টি গ্রাম নিয়ে স্বরুপপুর ইউনিয়ন। এরমধ্যে আটটি গ্রাম প্রায় সবটুকু জুড়ে রয়েছে নার্সারি আর ফলজ বাগান, বাকি পাঁচ গ্রামে আংশিক। ইউনিয়নে মোট আবাদযোগ্য জমি ২৭৭০ হেক্টর।

এরমধ্যে শুধু নার্সারি রয়েছে ৪৩ হেক্টর জমিতে। বাকি দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে ফলজ গাছ। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং জাতের কমলা, মাল্টা ও বারি-১১ সহ বিভিন্ন জাতের আম । কথা হয় নার্সারি ব্যবসায়ী রফিকুলের সাথে। রফিকুল জানায়, এক সময় না খেয়ে দিন কাটিয়েছি। এখন আমার নার্সারিতে প্রতিদিন ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে। বছরের বারো মাসই যাদের কর্মসংস্থান আমার নার্সারিতে।

দেশের আমিই প্রথম সমতল ভূমিতে দার্জিলিং জাতের কমলা চাষে করে সফল হয়েছি। এখন আমার কাছ থেকে চারা নিয়ে দেশের শত শত কৃষক দার্জিলিং জাতের এই কমলা চাষ করছে।

একই ইউনিয়নের হানিফপুর গ্রামের ভাই ভাই নার্সারির মালিক ইমরোজ হোসেন জানান, ১৯৯২ সালে আমরা তিন বন্ধু মিলে প্রথম নার্সারি গড়ে তুলি। বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে নার্সারিসহ ১৫ বিঘা জমিতে ফলজ গাছ রয়েছে। আমার নার্সারিতে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে। মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাসান আলী উপজেলার ইউনিয়ন জুড়ে নার্সারি ও ফলের চাষ হয় উল্লেখ করে জানান, তারা চারা উৎপাদন ও ফলজ বাগান করে লাভবান হচ্ছে। ফলে নার্সারিতে এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আমরা তাদের জৈব সার উৎপাদন, বালাইনাশক ও ফল উৎপাদনের যাবতীয় প্রযুক্তিগত সহযোগীতা করে থাকি।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by