রংপুর

উলিপুরে ৪০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি

  প্রতিনিধি ৭ জুলাই ২০২৪ , ৪:৩৪:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে ৪০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টির ফলে কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১২টি ও প্রাথমিক পর্যায়ে ২৮টি। বন্ধ থাকা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

অপরদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে বন্যার কারনে ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর ফলে বন্যা কবলীত এলাকায় মানুষসহ গবাদীপশুর তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টির ফলে কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে ২৮টি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ১২টি মোট ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে জানান সুত্রটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত উপজেলার সাহেবের আলগা, বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ ও হাতিয়া ইউনিয়নে গ্রামগুলোতে পানি বৃদ্ধির ফলে এসব এলাকায় থাকা ৪০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা গুলোর মধ্যে চর কলাকাটা গণি মিয়া দাখিল মাদ্রাসা, বকসীগঞ্জ রাজিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, খুদির কুটি আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়, গেন্দার আলগা স্কুল এন্ড কলেজ, নামাজের চর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, দৈ খাওয়ার চর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাতিয়া ভবেশ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বালাচর নাছিরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, বাগুয়া অনন্তপুর স্কুল এন্ড কলেজ, হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জনতাহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বিরহিম দাখিল মাদ্রাসা।

প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর মধ্যে বেগমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মশালের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চেরাগীর আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বাগুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গেন্দার আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাহেবের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুখের বাতির চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিন হাজারীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দই খাওয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুচ্ছগ্রাম সাহেবের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেকুরের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বকসীগঞ্জ সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালার চর রামরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাচাবাচা জাহাজের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২নং খামার দামার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর রামনিয়াসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গোড়াই পিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর সন্তোষ অভিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ সন্তোষ অভিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বন্ধ থাকা এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী কার্যক্রম সহ ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের কার্যক্রম বন্ধ বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া চরগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের ৬০ হাজার মানুষ। তারা গবাদী পশু নিয়ে পড়েছে বিপাকে। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এদিকে পানিবন্দি মানুষজন উচু জায়গায় আশ্রয়ের জন্য কলার ভেলায় ও নৌকায় করে ছুটছেন।

জাহাজের আলগা এলাকার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মাহিয়া আক্তার মিলি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ও বাড়িতে ৭দিন থেকে পানি আছে। এখন একটু করে পানি কমতে শুরু করেছে। স্কুল বন্ধ থাকায় সারাদিন বাড়িতে সময় কাটাতে হচ্ছে। আমাদের ষান্মাসিক মুল্যায়ন চলছে বন্যা আমাদের মুল্যায়ন কাজে অংশ গ্রহন করতে দিলোনা। স্কুল খুললে আমাদের মুল্যায়ন করা হবে।

অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে রহিমা খাতুন ৭ম শ্রেণী, লাকি খতুন ষষ্ঠ শ্রেনী ও নুরুদ্দীন শেখ ৮ম শ্রেণী সহ আরও অনেক শিক্ষার্থী বলেন, বন্যার পানি এসে আমাদের বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। সারাদিন বাসায় থাকতে ভালো লাগেনা। কবে পানি নেমে যাবে তারপর স্কুলে যেতে পাড়বো।

দই খাওয়ার চর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, আমার বিদ্যালয়ে বন্যার পানি উঠায় প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেয়া হবে। পরবর্তীতে সরকারি নির্দেশনা পেলে সকল শ্রেণির ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন সম্পন্ন করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমির হোসেন ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহতাব হোসেন জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টির ফলে কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২৮ টি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ১২টি। দুর্যোগ কালীন সময়ে প্রতিষ্ঠান গুলোর সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

পরিবেশ অনুকুল হলে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেয়া হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান, প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠান গুলো ষান্মাসিক মুল্যায়ন সম্পন্ন করবেন।

আরও খবর

Sponsered content