চট্টগ্রাম

গ্রামবাংলার ছনের ঘর বিলুপ্ত হলেও, বাঁশখালীতে এখনো বসে ছনের বাজার

  প্রতিনিধি ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৫:২১:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রামবাংলার ছনের ঘর বিলুপ্ত হলেও, বাঁশখালীতে এখনো বসে ছনের বাজার

আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ছনের ঘর এখন বিলুপ্তির পথে। ছন হলো ঘরের চালায় ব্যবহার করার জন্য উলু খড় জাতীয় একধরনের তৃণবিশেষ। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ছনের ঘর আজকাল বিলুপ্তির পথে। একসময় যে ছন দিয়ে মানুষ থাকার ঘরের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করত, এখন তা গ্রামীণ থাকার ঘর থেকে বিলুপ্ত হয়ে আধুনিক জগতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। পার্কের দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য বৈঠকখানায়, শখের রেস্টুরেন্ট, পাকা বাড়ির সামনে কিংবা বাগানে বসে আড্ডা দেওয়ার ঘর অথবা কোনো শুটিং স্পটে। অনেকের কাছে ছনের বাহারি ব্যবহার দেখে মনে হয় আধুনিকতার এক অনন্য ছোঁয়া। অনেকের পাকা বসতঘরের উপর তলায় ছনের তৈরি ছোট ঘরটিকে ঐতিহ্যের রূপ দেয়। চিরচেনা এই ছন তৎকালে ঘরের ছাউনির জন্য শতভাগ ব্যবহার হতো। ছনই ছিল ঘরের চালার একমাত্র ভরসা।

ঐতিহ্যের ছনের ঘর বিলুপ্তির এ সময়ে বাঁশখালীর বিভিন্ন হাট-বাজারে ছনের বাজার বসতে দেখা যায়। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ছনের বাজার চাম্বলের গোলাম গজের হাট। বহুকাল থেকে চাম্বলের ছনের বাজারটি পরিচিত। এছাড়াও বাঁশখালীর পুইছড়ি, চাম্বল, পুকুরিয়া, পৌরসভার মিয়ার বাজার, গুনাগরির রামদাশহাট সহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ক্ষুদ্রাকারের ছনের বাজার বসে। তবে চাম্বলের বিশালকারের ছনের বাজারটি গ্রামীণ অতীত ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন।

বাঁশখালীর পূর্ব পাহাড়ি এলাকায় বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ছন কাটা উৎসব চলে। ছন কেটে ধানের মতো মেলে দিয়ে কিছুদিন শুকানোর পর তা বিক্রির জন্য ভার বেঁধে হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। একসময় পাহাড়গুলো এলাকাভিত্তিক ছনখোলা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকার ছন। আধুনিক সভ্যতায় মানুষ এখন পাকা-আধাপাকা বাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত। ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করছে টিনকে। ফলে গ্রাম থেকে ছনের ব্যবহার ক্রমশ বিলুপ্তির পথে। যৎসমান্য ছন বাঁশখালীর পাহাড়ি অঞ্চল থেকে কেটে আনেন পাহাড়ি লোকজন।

চাম্বলের গোলাম গজের হাটের পাইকারি ছন ব্যবসায়ী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গ্রামে ছনের ব্যবহার নেই বললে চলে। তবে পাহাড়ি ছনের ব্যবহার হয় এখন পানের বরজে। পান চাষীরা স্থানীয় বাজার থেকে ছন ক্রয় করে তাদের বরজে ব্যবহার করে। যার ফলে এখনো বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থানে ছনের বাজার বসে।’

ছন ব্যবসায়ী জলিল বলেন, ‘পাহাড়ে আগের মতো ছন পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তাতেই স্থানীয় পানের বরজের চাহিদা মিটে। বাজারে ক্যাটাগরিভিত্তিক ভারপ্রতি এক হাজার থেকে ১৩ শ টাকা পর্যন্ত ছন বিক্রি হয়। স্থানীয় ক্রেতার পাশাপাশি মহেশখালীর পাইকারী ক্রেতাও আমাদের ছনের বাজারের অন্যতম ক্রেতা। আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় মাটির ঘর যেমন বিলুপ্তির পথে ঠিক তেমনি ছনের ব্যবহারও তেমন নেই। তাছাড়া ছনের চাহিদা কমে যাওয়ায় পাহাড়ী চাষীরাও বিমুখ হচ্ছে দিন দিন।’

বিগত দেড়যুগ আগেও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ছন উৎপন্ন হতো। বর্তমানে পাহাড়ের ঢালু কিংবা উপরিভাগে ফলমূলের চাষাবাদ, বৃক্ষরোপন, পাহাড় ন্যাড়া করা, পাহাড় কাটা ও পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে জঙ্গল পরিষ্কারসহ বিভিন্নভাবে পাহাড় ধ্বংসের কারণে ছন এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয় সচেতন মহল।

উপজেলার চাম্বল গোলাম গজার হাটে শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে আড়াই থেকে চার হাত এবং পাঁচ থেকে আট হাত লম্বা এক ভার ছন বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১৩০০ টাকায়। একসময় ছনের বাজারে ক্রেতার ভীড় থাকলেও এখন সে দৃশ্য বাজারে দেখা মেলে না। এখন বেশীরভাগ ছনের ব্যবহার হয় পানের বরজ-এ (পান ক্ষেত)। পান চাষীরা ছনের বৃহত্তম ক্রেতা।

আরও খবর

Sponsered content