চট্টগ্রাম

চাঁদপুরে লঞ্চঘাটে পাঠাগার, জ্ঞানের আলো ছড়াতে তরুণদের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

  প্রতিনিধি ১১ জুন ২০২১ , ৮:২৩:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর:

লঞ্চ কিংবা ট্রলারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় যখন একঘেয়েমি চেপে ধরছিল, তখনই বইয়ের পাতায় চোখ রেখে হারিয়ে গেলেন পৃথিবীর ফুসফুস অ্যামাজন জঙ্গলে। কিংবা গল্পের চরিত্রের সঙ্গে দোল খেতে খেতে যদি লঞ্চ বা ট্রলারের দেখা পেয়ে যান, তাতে মন্দ কি? অথবা ধর্মীয় বই পড়ে কাঙ্খিত গন্তব্য পথে যাওয়ার আগেই যদি নিজেকে মানসিকভাবে উন্নত করা যায় তাহলেতো কথাই নেই! বলছিলাম, লঞ্চঘাটে ভাসমান পাঠাগারের কথা। ‘যাত্রা পথের অবসরে, যদি সময় কাটে বই পড়ে’। তাইলেতো ভালোই হয়।
যাত্রাপথে জ্ঞানের আলো ছড়াতে এবং ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করতে লঞ্চঘাটে এমনি এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে সারা ফাউন্ডেশনের তত্বাবধায়নে পরিচালিত ‘মতলব উন্মুক্ত পাঠাগার’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন।

উদ্যোক্তারা যার নাম দিয়েছেন, লঞ্চঘাট ভাসমান লাইব্রেরী। যেখানে পাঠকদের জন্য বই পড়ার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। পল্টুনের ভিতরে অবসরে বই পড়ার মাধ্যমে আনন্দ ছড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সামাজিক সংগঠনটি। চাঁদপুর টু নারায়ণগঞ্জ রুটের মতলব উত্তরের লঞ্চঘাটগুলোতে নামলেই মিলবে তরুণদের এ পাঠাগারের দেখা। পাঠাগারগুলোতে আছে বিশেষ করে উপন্যাস, গল্পের বই, রম্য রচনা, ভ্রমণ কাহিনী, প্রবন্ধের বই, জীবনীগ্রন্থ থেকে শুরু করে ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সমাজতত্ত্বসহ যাবতীয় সব বই।

শুক্রবার (১১ জুন) ষাটনল লঞ্চঘাটে পাঠাগারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় জনবহুল প্রত্যেকটি ঘাটে এমন উন্মুক্ত পাঠাগার স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্দ্যোক্তারা।
সারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, তরুণ সমাজসেবক ও সংগঠক উদ্যোক্তা আমিরুল ইসলাম রাসেলের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক এস.কে সানির সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, দৈনিক বাংলাদেশের আলোর ক্রাইম ইনচার্জ সুমন সরদার, দৈনিক ভোরের দর্পণ ও সময়ের কন্ঠস্বরের জেলা প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান, সাদাকালো সামাজিক সংগঠনের সভাপতি সোহেল সরকার, বিশিষ্ট সমাজসেবক আবুল কালাম আজাদ ও গোলাম রাব্বানী মোল্লা প্রমুখ। পবিত্র কুরআন তেলওয়াত করেন হাফেজ মাও. ই.এম.আই গাজ্জালী।

উদ্যোগের কথা জানতে চাইলে উদ্যোক্তা আমিরুল ইসলাম রাসেল ভোরের দর্পণকে বলেন, আমরা বেশি বেশি পাঠাগার তৈরি করতে চাই। মূলত জ্ঞানের আলো ছড়াতে আমরা মানুষকে বইমুখী করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়াও করোনাকালে ত্রাণ বিতরণ, রমজানে ইফতার সামগ্রী এবং রাজধানীতে পথে পথে থাকা দুস্থদের মাঝে সেহেরী বিতরণ ছাড়াও বয়স্কদের মাঝে কুরআন শিক্ষা, শিশুদের খাবার সামগ্রী, যুবকদের খেলাধুলার সামগ্রী, শিক্ষা উপকরণ ও অসহায়দের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা মানবসেবায় ব্রত থাকি।

সামনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘সারা ফাউন্ডেশন মূলত আমাদের একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে আমরা অন্তত ১০ টি অসহায় পরিবারের ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করবো এবং অসহায় মা-বাবাকে লালন-পালন করবো এটাই আমাদের স্বপ্ন।’
নারায়ণগঞ্জ গামী যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লঞ্চঘাটে পাঠাগার’ প্রথম দেখলাম! দেখেই অবাক! সাধারণত লঞ্চে নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার জন্য আসা। এসেই দেখি অনেকে বই পড়ছেন। তখন আমিও অবসর সময়টা কাটানোর জন্য গল্পের বই হাতে নিলাম। কারণ অপেক্ষা বিরক্তিকর একটি বিষয়। তবে হাতে বই থাকায়, সময়টা ভালোই কাটছে।
কালীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক এইচ এম শরীফ সরকার বলেন, বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিকেল বেলা লঞ্চ ঘাটে এসে আড্ডা দেয়। নদীর বিপরীতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করে। বাড়িতে বই থাকলেও পড়া হয়ে ওঠেনা। কিন্তু যখন নীরব নিস্তব্ধ একটা জায়গায় এসে সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি হাতের নাগালে পছন্দের বই পাওয়া যায় তাহলে তো কথায় নেই।
বার্তা প্রেরক
মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর প্রতিনিধি

আরও খবর

Sponsered content

Powered by