চট্টগ্রাম

দোহাজারী বাজারে ব্যস্ততা আর কদর দু’টোই বেড়েছে মাছ কাটায় নিযুক্ত পেশাজীবিদের

  প্রতিনিধি ২৬ নভেম্বর ২০২৪ , ৬:৩৬:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

দোহাজারী বাজারে ব্যস্ততা আর কদর দু'টোই বেড়েছে মাছ কাটায় নিযুক্ত পেশাজীবিদের

আগেকার দিনে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোঁরার মালিকরা বাজার থেকে মাছ কাটিয়ে নিয়ে যেতেন। মানুষ বাজার থেকে আস্ত মাছ কিনে নিয়ে যেত বাড়িতে। কিন্তু দিন বদলেছে, মানুষের জীবনে এসেছে ব্যস্ততা। মাছ কাটা এখন অধিকাংশ গৃহকর্ত্রীর কাছে রীতিমতো আতঙ্কের বিষয়। বর্জ্য ফেলার সমস্যা, বঁটির সমস্যা, কাটতে না জানা, পরিষ্কার করার ঝামেলা আর সময়সাপেক্ষ হওয়ায় অনেক গৃহকর্ত্রী এখন বড় মাছও কুটতে চায় না। শিং-মাগুড়, কই কিংবা কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ নিলে অনেক সময় গৃহকর্তার সাথে গৃহকর্ত্রীর বচসা হয়।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার কাঁচা বাজারে ক্রেতাদের কেনা মাছ অর্থের বিনিময়ে কেটে দেন একদল মানুষ৷ সময় বাঁচাতে ও গৃহকর্ত্রীর পরিশ্রম কমাতে অনেক ক্রেতা তাঁদের সহায়তা নিয়ে থাকেন৷ আগ্রহী ক্রেতাদের মাছ পরিস্কার করে পিস পিস করে দিতে কেজিপ্রতি তাঁরা নেন ১৫ টাকা। কেবলমাত্র একটি ধারালো দা ও একটি গাছের গুঁড়ি (স্থানীয় ভাষায় চেঁদি) হলো তাঁদের পুঁজি।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক লাগোয়া এই বাজারে ১০ থেকে ১২ জন দুই কাতারে বসে ক্রেতার মাছ কাটার কাজ করছেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তাঁদের গড়ে আয় হয় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহের বন্ধের দিনগুলোতে বাজারে ক্রেতা বেশি থাকায় কিছুটা বাড়তি আয় হয় তাদের।

কালিয়াইশ ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের জলদাশ পাড়ার পরিমল দাস গত ১৫ বছর ধরে দোহাজারী বাজারে মাছ কাটার কাজ করছেন। এই পেশায় আয় কেমন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মাছ কেটেও যে সংসার চালানো যায় এটা আগে অনেকেই ভাবতেন না। আমি শুরু করার পর আমার দেখাদেখি এই বাজারে মাছ কেটে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মাছ কেটে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হয়। ভাগ্য ভালো হলে ১ হাজার টাকাও হয়। এই আয় দিয়ে সংসার ভালোই চলছে। ৪ ছেলের মধ্যে একজন এলএলবি পাশ করেছে, আরেকজন এইচএসসি পাশ করেছে। অপর দুই ছেলের মধ্যে একজন ৯ম শ্রেণিতে আরেকজন ২য় শ্রেণিতে পড়ছে।”

গত ৮ বছর ধরে এই বাজারে মাছ কাটেন বলরাম জলদাস। তিনি বলেন, “আগে বাজারে মাছ বিক্রি করতাম। পুঁজি কম থাকায় যে আয় হতো, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। বুদ্ধি খাটিয়ে একটি ধারালো বটি ও গাছের গুঁড়ি কিনে মাছ কাটার কাজে নেমে পড়ি। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও আবর্জনা ফেলার খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হয়। বর্ষাকালে সাগরের মাছ কম থাকায় পুকুরের মাছ বাজারে বেশি থাকে। ওই সময়ে আয় তুলনামূলক বেশি হয়। এই পেশার আয় দিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভালোই চলছে আমার সংসার। ১১ বছর বয়সী মেয়ে ৩য় শ্রেণিতে এবং ৮ বছর বয়সী ছেলে শিশু শ্রেণিতে পড়ে।”

৭নম্বর ওয়ার্ডের শাহ্ আলম রুবেল নামের এক ক্রেতা জানান, “বাজার থেকে আস্ত মাছ কেনার পর কেটে সাইজ করে বাড়িতে নিয়ে গেলে ঘরের মানুষের কাছে বাড়তি কদর থাকে। মাছ কাটায় নিযুক্ত পেশাজীবিরা আছে বলে শত ব্যস্ততার মাঝেও নিশ্চিন্তে যেতে পারি মাছ বাজারে। কিনতে পারি বড় কিংবা ছোট মাছ। আগে মা-চাচিরা বাড়িতে মাছ কাটতেন, এখন সেটা বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। ভবিষ্যতে গ্রামে-গঞ্জে শহরের মতো মেশিনের মাধ্যমে মাছ কাটা প্রথা চালু হতে পারে।”

পূর্ব দোহাজারীর গৃহিণী শাহনাজ বেগম বলেন, “বর্তমানে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, স্কুল, কোচিং এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এরপর আবার রান্নাবান্নার কাজ করতে হয়। তাই মাছ কাটার তেমন সময় হয় না। বাড়তি কিছু টাকা খরচ হলেও সময় অল্প লাগে, মাছ কাটার ঝামেলা থেকেও বেঁচে যাই।”

আরও খবর

Sponsered content