চট্টগ্রাম

নগরজুড়ে পানির জন্য হাহাকার, ওয়াসা যেনো নির্বিকার

  প্রতিনিধি ১৩ মার্চ ২০২৫ , ৭:২১:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

নগরজুড়ে পানির জন্য হাহাকার, ওয়াসা যেনো নির্বিকার

ঢাকঢোল পিটিয়ে পবিত্র রমজানের প্রস্তুতির কথা জানালেও রোজার শুরু থেকে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে দেখা দিয়েছে ওয়াসার পানির তীব্র সংকট। ফলে রমজানে মানুষের ইবাদত বন্দেগী যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনি জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দূর্ভোগ। জবাবে ওয়াসা কেবল কাজ চলছে বলেই দায়িত্ব শেষ করছে। একেতো পানির দেখা মিলছেনা, দ্বিতীয়ত পানির দেখা কখনও মিললে সে পানি ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত, নোনতা যা কোনোভাবেই ব্যবহারযোগ্য না।

ফেব্রুয়ারিতে নগরের অক্সিজেন-কুয়াইশ এলাকায় জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে এস্কেভেটরের আঘাতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ ফেটে যায়। ওই পাইপ মেরামত করতে সময় লাগে ৭-৮ দিন। এই সময়ের মধ্যে নগরের ৩০ এলাকায় দেখা দেয় তীব্র পানিসংকট। নাওয়া-খাওয়া থেকে শুরু করে নিত্যকাজে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় মানুষকে। এরপর গেল ৭ দিন ধরে নগরের আরও ২০ এলাকায় পানিসংকট দেখা দেয়। এবারও কারণ একই। প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে পাইপ ফাটিয়ে ফেলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ। ফলে একই দশায় পড়তে হয় নগরের ২০টি এলাকার কয়েক লাখ মানুষকে। আর রমজান মাস হওয়ায় সেই ভোগান্তি বাড়ে কয়েক গুণ।

জানা গেছে, গত ৮ মার্চ শনিবার রাতে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও সম্প্রসারণ শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে নগরের হালিশহরের সাগরিকায় ওয়াসার ১১০০ এম এম এর প্রধান পানি সঞ্চালন লাইন ফেটে যায়। সিডিএর মতো তারাও এস্কক্যাভেটর ড্রিল দিয়ে খনন করছিল। এরপর থেকে নগরের আগ্রাবাদ, গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর, বৌ বাজার, নতুন বাজার, ঈদগাঁ, বড়পুল, ছোটপুল, দেওয়ানহাট, পোস্তারপাড়, পানওয়ালাপাড়া, ধনীয়ালাপাড়া, মুহুরীপাড়া, পাহাড়তলী, কদমতলী, হাজীপাড়া, শান্তিবাগ, মাদারবাড়ি, মোগলটুলি, পাঠানটুলিসহ আশপাশের ২০টি এলাকায় পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এমনিতেই ওই এলাকাগুলোতে আগে থেকেও পানিসংকট চলছিল দুই ধরনের পাইপ সংস্থাপনের কারণে।

গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ রমজানের শুরু থেকেই শুরু হয়েছে দুর্ভোগ। হাত মুখ ধোয়া, রান্না বান্নার পানিও নেই। গোসল কিংবা কাপড় ছোপড় ধোয়াতো দূরের কথা। ওয়াসার কোনো কর্মকর্তাই এ সমস্যার কোনো সমাধান দিতে পারছেন না।

গ্রিণ ভিউ আবাসিক এলাকার গৃহিনী ফারজানা আফরিন নিপা বলেন, ‘ ওয়াসার তেলেসমাতি কিছুই বুঝতেছিনা। ঘরে ব্যবহৃত কাপড় স্তুপ হয়ে আছে পানির অভাবে ধুতে পারছিনা। রান্না আর তালাবাসনও জমে এঁটো দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে।

শেগুফতা নাসরীন আইরিন নামের এক গৃহিনী বলেন, বাচ্চাদের দিয়ে নিচের কল থেকে পানি বালতি, জগ, মগে করে চারতলায় তুলে দৈনন্দিন কাজ সারছি। ইতোমধ্যে বাসা বন্ধ রেখে অন্য এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে ইফতার সেহেরী খেয়েছি। এভাবেতো জীবন যাপন করা যায় না।

এ বিষয়ে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘সাগরিকার প্রধান সঞ্চালন পাইপ মেরামত শেষ হয়েছে। ভোর রাত থেকে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে আমরা পানির চাপ বাড়াচ্ছি। কারণ যখন এটা মেরামত করা হয় তখন সেটা কাঁচা থাকে। এর ফলে পানির চাপ এখনি বাড়ানো যাচ্ছে না।’

আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক জাহেদ কায়সার বলেন, ওয়াসার বক্তব্য সঠিক নয়। এখন না হয় পাইপ কাটা পড়ে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু সারাবছরইতো তাদের সংকট লেগে আছে। তাছাড়া পানি যে নোংরা, ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত, নোনা, ব্যবহার অযোগ্য সে বিষয়ে ওয়াসা কী বলবেন ?

আরও খবর

Sponsered content