দেশজুড়ে

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে দায়বদ্ধতা শুধু সরকারের একার নয়

  প্রতিনিধি ২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৫:০০:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে দায়বদ্ধতা শুধু সরকারের একার নয়

পাহাড়ে বসবাসকারী জনমানুষের মতপার্থক্যের মধ্যে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৭ টি বছর পেরিয়ে গেলো। চুক্তি পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় যারাই সরকার গঠন করেছেন সকলেই শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন।

বান্দরবানে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সেনা রিজিয়নের সহযোগিতায় এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে আলোচনা সভা ও  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সকালে জেলার কেএসআই অডিটোরিয়ামে শান্তির পায়রা উড়িয়ে কেক কেটে বর্ষপূর্তি উদযাপনের সূচনা হয়।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রিজিয়ন ও ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।

প্রধান অতিথি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন চুক্তি বাস্তবায়নের দায়বদ্ধতার আঙ্গুল  শুধু সরকারের দিকে দেখালে চলবে না চুক্তি বাস্তবায়নে অপর পক্ষেরও দায়বদ্ধতা আছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সকল সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসাধারণের জীবনমানের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে এবং চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক ছিলো।

সেনাবাহিনী পার্বত্য বান্দরবানে আইনশৃঙ্খলা সহযোগী সহ আমরা চাই স্থিতিশীল নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় থাকুক।

তিনি বলেন চুক্তিতে যা বলা ছিলো তা মেনে চল্লে এখনো কেনো পাহাড়ে অস্থিরতা!তিনি বলেন চুক্তি বাস্তবায়নে সকলকে আন্তরিক হতে হবে।আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়,সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন ছাড় দেয়া হবে না।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ডিজিএফআইয়ের কর্নেল জিএস,আসাদুল্লাহ জামশেদ,জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী,মোঃ মাসুম বিল্লাহ,জেলা পুলিশ সুপার, মোঃ শহিদুল্লাহ কাউছার,স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল হক।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি সহ পাহাড়ি বাঙ্গালী সহ নানা শ্রেণী পেশার জনসাধারণ।

প্রসঙ্গত পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ করে পাহাড়ে স্থায়ী ভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনতে  ১৯৯৭ সালের এই দিনে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সশস্ত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর সাথে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিলো পার্বত্য শান্তি চুক্তি। 

চুক্তির ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে পড়া পার্বত্য অঞ্চলে  নেয়া হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প।শান্তিচুক্তি পরবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা আর পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এতে অর্থনৈতিক ভাবে মানোন্নয়ন হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের জনমানুষের জীবনধারা।

শান্তি চুক্তির আগে পাহাড়ে একটি আঞ্চলিক সংগঠন থাকলেও গত ২৭ বছরে অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে আরও পাঁচটি সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠনের জন্ম নিয়েছে।

বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলায় ছয়টি আঞ্চলিক সংগঠনের সশস্ত্র তৎপরতা রয়েছে।

সেগুলো হলো- সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস, তাদের বিরোধী সংস্কারপন্থি পিসিজেএসএস এমএন লারমা গ্রুপ, প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), তাদের বিরোধীয় গ্রুপ ইউপিপিডিএফ গণতান্ত্রিক, মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) ও সর্বশেষ আলোচিত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।

এসব সংগঠনের সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে প্রতিনিয়তই  রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘাত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতের  ফলে পাহাড়ে আজও অশান্তির বাতাস বইছে।

এদিকে চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এটিকে ‘কালো চুক্তি’   বলছে বাঙালিভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠনগুলো,এছাড়া পার্বত্য চুক্তির সংশোধনীরো দাবি জানিয়ে আসছেন শুরু অনেক দিন থেকে।চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে ৭২টি ধারার ৬৯টি বাস্তবায়ন হয়েছে বলা হলেও জনসংহতি সমিতি বলছে ভিন্ন কথা।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে সংস্কারপন্থি পিসিজেএসএস (এমএন লারমা গ্রুপ)  জেলার রাজার মাঠে জনসমাবেশ ও আলোচনা সভা করেন।এসময় প্রধান অতিথি পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির(এমএন লারমা) সদস্য শ্রী কে এস মং মারমা বলেন ফেসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একদিকে যেমন শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলেছে অন্য দিকে হাইকোর্ট,সুপ্রিম কোর্টে তাদের মানুষ দিয়ে চুক্তি বিরোধী মামলা করেছে।চুক্তি বাস্তবানে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে সকালে জেলা সদর হাসপাতালে জেলাপরিষদ, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্পিং,রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এছাড়া সেনা রিজিয়নের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ,আর্থিক সহায়তা,আত্মকর্মসংস্থানের জন্য নারীদের সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

আরও খবর

Sponsered content