প্রতিনিধি ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৬:৪৮:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রাকৃতিক রূপ লাবণ্যে ঘেরা পার্বত্য জেলা বান্দরবান। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে এই অঞ্চলের কৃষিতেও আছে ভিন্নতা। চলতি আমন মৌসুমে এই অঞ্চলের সমতল এলাকায় ভারতীয় পাজাম ধানের উৎপাদন বেশি হওয়ায় খুশি কৃষক।
পাহাড়ের বুকে সবুজ মাঠ জুড়ে পাকা ধান কেটে, তা ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
সরজমিনে জেলা সদরের রেইসা, গোয়ালিয়াখোলা,ক্যামলং সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মাঠ জুড়ে পাকা ধান কাটছেন পাহাড়ি নারীরা।তাদের মুখের হাসিই বলে দেয় এই মৌসুমে ভালো ফলন তারা ঘরে তুলছেন।
জেলা সদরের রেইসা এলাকার এক কৃষনী বলেন গতবছর এই জমিতে ব্রী-১১ ধান লাগানোর পরেও আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় এ বছর আমন মৌসুমে জমিতে ভারতীয় পাজাম ধান রোপণ করেছেন। ধানের উৎপাদন খরচ কম, রোগবালাই কম হওয়ার কারণে এই এলাকার প্রায় সবগুলো জমিতেই ভারতীয় পাজাম ধানের চাষাবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান।
একই এলাকার কৃষক দেলোয়ার জানান আমন মৌসুমে তার ৪ কানি জমিতে লাগিয়েছেন ভারতীয় পাজাম ধান, ফসল দেখে খুশি তিনি,তিনি জানান বীজতলা তৈরী,মাঠে ধান লাগানো,কাটা,ধান মাড়াই করা সহ প্রতি কানিতে ৪ মাসে ১৪ হাজার টাকা খরচ হবে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান তার জমিতে প্রতি কানিতে ২০ মন ধান পাওয়া যাবে,ধান মাড়াইয়ের পর ৫৬০ কেজি চাউল পাওয়া যাবে, ভারতীয় পাজামের বর্তমান সময়ের বাজার মূল্য ৬০ টাকা করে হলে জার বাজার মূল্য ৩৩,৬০০ টাকা দাড়ায়।সে হিসেবে উৎপাদ খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের হাতে লাভ থাকবে ১৯ হাজার ৬শত টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, গতবছর জেলায় ৭৯৩ হেঃ জমিতে ভারতীয় পাজাম ধানের চাষাবাদ হলেও চলতি ২৪-২৫ আমন আবাদ মৌসুমে জেলায় ১৪শ ৪৫ হেক্টর জমিতে ভারতীয় পাজাম ধানের চাষাবাদ হয়েছে।
অনুকুল আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারনে এ বছর আমন মৌসুমে জেলা সদর সহ নাইক্ষ্যংছড়ি,লামা,রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলা সহ ৪ টি উপজেলায় ভারতীয় পাজাম ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে,এর মধ্যে সদর উপজেলায়- ১০৫০ হেঃ,রোয়াংছড়ি উপজেলায়-৫৩.৬ হেঃ,লামা উপজেলায়- ১৮৯ হেঃ,নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়- ১৫৫ হেঃ জমিতে চাষাবাদ হয়েছে এই ধানের তিনটি জাত।
উচ্চ ফলনশীল উপশী জাতের ধান ভারতীয় পাজাম এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা না হলেও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে উৎপাদন বেশি হওয়ার কারনে এই অঞ্চলের সমতল এলাকার কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উচ্চ ফলনশীল ধানের এই জাতটি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এম এম শাহ নেওয়াজ বলেন আমন আবাদ মৌসুমে এ বছর জেলায় মোট ১১২৪১ হেঃ জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়েছে,তিনি বলেন কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটের উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতের বাইরে এই অঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল ভারতীয় পাজাম ধানের ব্যাপক চাষাবাদ হয়।তিনি জানান মোটা চাউল ও এই চাউলের ভাত খেতে সুস্বাদু হওয়ার কারনে কৃষকদের এটি খুবই পছন্দ।তিনি জানান পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের সিমান্তে বসবাসকারী কৃষকদের মাধ্যমে সিমান্ত দিয়ে এই ধানের বীজ প্রথমে এই অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং ক্রমেই এর চাষাবাদ বৃদ্ধি ও জনপ্রিয়তা পায়।এই জাতের মধ্যে বেটে পানজা, লাল পানজা, ভারতীয় পানজা তিনটি জাতের জনপ্রিয়তা আছে বলে তিনি জানান।
এই কৃষিবিদ জানান আমাদের দেশের কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটের মাধ্যমে প্রায় ১০০ এর উপরে ধানের জাত আছে এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতও আছে, তবে কৃষকদের পছন্দের তালিকায় ভারতীয় পাজাম ধান টিও বেশ জনপ্রিয়।
ঐতিহ্যগত ভাবে পাহাড়ে জুম চাষের প্রচলন রয়েছে আউশ মৌসুমে এই অঞ্চলের চাষিরা পাহাড়ে ধানের পাশাপাশি মিশ্র চাষাবাদ করেন তবে জুমে ধান উৎপাদনের দিক থেকে প্রতি হেঃ রে ২-২.৫ মেঃ টন ধান পাওয়া যায়,যা খুব একটা বেশি না তাই আমন মৌসুমে জুমিয়াদের সমতল পাহাড়ি জমিতে উচ্চ ফলনশীল ভারতীয় পাজাম ধানের চাষাবাদে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানান এই কৃষিবিদ।
এদিকে প্রতি বছর সরকার কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান করলেও পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক জটিলতার কারণে কৃষি কাজে ব্যবহৃত সার, কিটনাশক ঔষধ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কৃষকের হাতে পৌছানো পর্যন্ত এর বাজার মূল্য সীমাহীন বেড়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন কৃষকরা এতে সার,কিটনাশক কিনতে না পারার কারনে অনেক আবাদি জমি পতিত অবস্থায় থেকে যায় বলে জানান কৃষক সুমন। সরকার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আন্তরিক হলে এ সকল সমস্যা সমাধান হবে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।