দেশজুড়ে

পূর্ব সুন্দরবনে ১এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে মধু আহরণ

  প্রতিনিধি ৩১ মার্চ ২০২৪ , ৮:১৭:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

পূর্ব সুন্দরবনে ১এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে মধু আহরণ

পূর্ব সুন্দরবনে ১এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে মধু আহরণ মৌসুম। নৌকা মেরামত, মহাজনের কাছ থেকে দাদন নেওয়াসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বনে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন মৌয়ালরা। এবার বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে দুই সহস্রাধিক মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে যাবেন বলে ধারণা করছে বনবিভাগ। যদিও গোটা সুন্দরবনে ১৫দিন এগিয়ে ১৫ মার্চ থেকে বন বিভাগ পারমিট (অনুমতি) দেয়া করলেও পূর্ব সুন্দরবন এলাকার মৌয়ালদের তাতে আগ্রহ নেই। কারণ এই আগাম সময়ে পূর্ব সুন্দরবনের গাছে ফুল ফোটেনা। এই সময়টাতে পশ্চিম সুন্দরবনের গাছে আগাম ফুল চলে আসায় সাতক্ষীরা, কয়রা এলাকার মৌয়ালরা যায় মধু সংগ্রহে।

মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বনের কোনো কোনো অংশের গাছে আগাম ফুল চলে আসে। এ কারণে গত তিন বছর ধরে আগাম আসা ফুলের মধুটা সংগ্রহের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয় বনবিভাগ।বনবিভাগ জানায়, এ বছর ৬০০ কুইন্টার মধু এবং ২০০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে গতবছর আহরণ হয়েছিল ৫৪১ কুইন্টাল মধু এবং ১৬১ কুইন্টাল মোম।

মধু সংগ্রহের নিয়ম এবং বন আইনের নীতিমালা অনুসরণ করে এক তারিখ (১এপ্রিল) থেকেই মৌয়ালদের পাস (অনুমতিপত্র) দেওয়া শুরু হবে। উপজেলার সোনাতলা গ্রামের মৌয়াল নুরুল ইসলাম ও খুড়িয়াখালী গ্রামের মৌয়াল আউয়াল খান জানান, তাদের এলাকার সব মৌয়ালরা মধু সংগ্রহে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এখন বনবিভাগের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। তাদের একেক দলে ১০-১২ জন করে মৌয়াল রয়েছেন।

তাদের কেউ ১৫বছর কেউ ২০ বছর ধরে মধু আহরণ করছেন। মৌয়ালরা আরো জানান, গতবছর তাদের দলের প্রত্যেক সদস্য দুই মণ করে মধু পেয়েছিলেন। পাস সংগ্রহ, সরকারি রাজস্ব এবং খাওয়া খরচ মিলিয়ে মৌসুমে তাদের একেকজনের খরচ হয় ১২হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর দুই মণ মধু বিক্রি করে একেকজন পেয়েছিলেন ৬০হাজার টাকা। এবছরও আগাম বৃষ্টি হওয়ায় আশানুরূপ মধু পাবেন বলে মনে করছেন তারা।মধু ব্যবসায়ী মো. রাসেল আহমেদ বলেন, গতবছর তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম।

এবছরও একই পরিমাণ বিনিয়োগের আশা আছে। গতবছর প্রায় ১৪ মণ মধু বিক্রি করেছি। প্রতিকেজি মধু খুচরা বিক্রি হয়েছে প্রকার ভেদে ১হাজার টাকা থেকে ১হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। মধু ব্যবসায়ী জালাল মোল্লা বলেন, গত তিন বছর ধরে সুন্দরবনে আগাম মধুর পাস দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনের সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের যে মধু সেটা আসে খলিসা এবং গরান ফুল থেকে। পশ্চিম সুন্দরবন অঞ্চলের খলিসা এবং গরান গাছে আগাম ফুল চলে আসে। কিন্তু আমাদের পূর্ব সুন্দরবনে এই সময় খলিসা ও গরান গাছে ফুল আসেনা। পুরো এপ্রিল মাস খলিসা ও গরান ফুলের মধু সংগ্রহ হয়।

মে মাসজুড়ে থাকে কেওড়া ও ছইলা ফুল। এর পর জুন মাসে শুরু হয় গেওয়া ফুলের মধু আহরণ। তবে, জুন মাস থেকে সুন্দরবনের সব ধরনের জলজ ও বনজ সম্পদ আহরণে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় গেওয়ার মধু সংগ্রহ সম্ভব হয় না। পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান বলেন, ১৫ মার্চ থেকেই মূলত মধু আহরণের পারমিট দেয়া শুরু হয়েছে। পশ্চিম বনবিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের মৌয়ালরা ওই সময় থেকেই মধু সংগ্রহ করছেন।

জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের পূর্ব সুন্দরবনের গাছে ফুল একটু দেরিতে আসে। যার কারণে দুই বিভাগে মধু সংগ্রহ একই সময় শুরু হয় না। বরাবরের মতো এক তারিখ (১এপ্রিল) থেকেই বনে যাবেন মৌয়ালরা। মৌয়ালরা অফিসে এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এ বছর গাছে গাছে ফুলের সমারোহ বেশি। তাতে বোঝা যায় গতবারের তুলনায় বেশি মধু আহরণ হবে। ৬০০ কুইন্টাল মধু এবং ২০০ কুইন্টাল মোম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আশা করি তা পূরণ হবে। তবে, মৌসুমের শেষের দিকে জুন মাস থেকে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে পুরো মৌসুম মধু মধুরণ সম্ভব হয় না।বন বিভাগের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, একেকজন মৌয়ালকে ১৪দিনের জন্য পাস দেওয়া হয়। বনে প্রবেশ করার পর মধু আহরণের জন্য ৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয় মৌয়ালদের।

উল্লেখযোগ্য নির্দেশনাগুলো হচ্ছে কোনো মৌয়াল মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুণ্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন না। এই নির্দেশনা অমান্য করেল তার বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by