দেশজুড়ে

প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে আড়াই মাসে ও স্ব-পদে বহাল অভিযুক্ত অধ্যক্ষ

  সাইফুল ইসলাম ১৪ মে ২০২৪ , ৬:১৯:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে আড়াই মাসে ও স্ব-পদে বহাল অভিযুক্ত অধ্যক্ষ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে নরসিংদীর পলাশের ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ.ক. ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস অডিও ভাইরাল সংবাদটি ২ মাস ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো ও স্ব-পদে বহাল আছেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আ.ক. ম রেজাউল করিম। শুধু তাই নয়, বিতর্কিত পরীক্ষার নিয়োগপ্রাপ্তরা মাদ্রাসায় যোগদান করে নিয়মিত চাকরি ও করছেন। আর এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সদস্যবৃন্দের কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

কোন অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতা বলে আড়াই মাসে ও জেলা প্রশাসনের চিঠি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশনা কার্যকর হয়নি তা নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে, এতো বড় ঘটনা ধামাচাপা দিতে উপর মহলে জোর তদবির চালাচ্ছেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষ। এর আগে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি অত্র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ. ক. ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ঘটনার ব্যবস্থা নিতে তৎকালীন সভাপতি সরকার কাউছার আহম্মদকে জেলা প্রশাসন নরসিংদী থেকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিতে অধ্যক্ষ আ.ক. ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অসদাচরণের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, নিয়োগ প্রার্থীদের চাকরি প্রধানের প্রলোভন দেখিয়ে আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত মর্মে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। যা প্রকাশিত অডিও ক্লিপের কথোপকথনের মাধ্যমে সু- স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। এরপর পর সভাপতি সরকার কাউসার আহমেদ পদত্যাগ করায় গত ১৩ মে নতুন সভাপতি আল মুজাহিদ হোসেন তুষারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন নরসিংদী থেকে আর ও একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। গভর্নিং বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন থেকে প্রথম চিঠি ইস্যুর পর সভাপতি সহ সকল সদস্য স্থানীয় এমপির সাথে আমরা দেখা করি।

এমপি সাহেব স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের চিঠির আলোকে ব্যবস্থা নিতে। সেখান থেকে ফিরে পূর্বের সভাপতি সরকার কাউছার আহমেদ অজানা কারণে পদত্যাগ করায় এ বিষয়ে এতোদিন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। সামনের মিটিং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অত্র মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী জানান,জেলা প্রশাসনের চিঠির আলোকে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় এমপি ও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতিসহ সকল সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। সামনের মিটিং শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আ.ক.ম রেজাউল করিম। ওনার দাবি এগুলো, মিথ্যা,বানোয়াট, একটি কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র ।

কল রেকর্ডটি ওনার অনুমতি ছাড়া ধারণকৃত। যা সংবিধান বিরোধী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মাদ্রাসার সভাপতি ও ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র আল মুজাহিদ হোসেন তুষার জানান, আমি সভাপতি হওয়ার পর ঈদের আগে একটি মাত্র মিটিং হয়েছে। আগামী ১৬ তারিখ এ বিষয়ে গভর্নিং বডির ১৯ তম সাধারণত সভা। সভা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মিলন কান্তি কৃষ্ণ হালদার বলেন,’জেলা প্রশাসন থেকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। সামনের মিটিং এ বিষয়ে মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের মিটিং রয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানানো যাবে।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার কল রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর নানা নাটকীয়তায় মাদ্রাসার সভাপতি আবু কাউছার পদত্যাগ করেছেন। নতুন সভাপতিকে এ বিষয়ে আবারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সভায় অবশ্যই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে ইবতেদায়ী শাখার প্রধান, কম্পিউটার অপারেটর ও ল্যাব সহকারী পদের জন্য আবেদন চাওয়া হয়।

মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, ২৩ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেদিন বিকেলে কম্পিউটার অপারেটর পদে পলাশ উপজেলার তানভীর আহমেদ ও ল্যাব সহকারী পদে শিবপুর সাধারচর এলাকার ইতি আক্তারকে নির্বাচিত করা হয়। এরপর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, নিয়োগ পরীক্ষার অন্য আবেদনকারীর সঙ্গে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের ফোনে প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে সর্বমহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

আরও খবর

Sponsered content