প্রতিনিধি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪:৫১:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ
বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এর সেক্রেটারি নুরুল আমিন চৌধুরী (আরমান),একই সাথে তিনি বান্দরবান পৌরসভায় হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইন, ২০০৯-এর ৫ ধারায় পৌরসভা সরকারের একটি প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে স্বীকৃত।এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি বান্দরবান ব্যবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করে আসছেন বিগত ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে।
একক ক্ষমতাবলে চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারির পদে থেকে বিভিন্ন ঠিকাদার ও ব্যাবসায়িদের দিচ্ছেন চেম্বার অব কমার্সের ট্রেড সার্টিফিকেট। ট্রেড সার্টিফিকেট এ বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট বান্দরবান জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি,ক্য শৈ হ্লা এর স্বাক্ষর দেয়ার বাধ্যকতা থাকা সর্থেও সেক্রেটারি নুরুল আমিন চৌধুরী (আরমান) নিজের স্বাক্ষর এর পাশাপাশি সংস্থাটির প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর ও নিজে দিয়ে ট্রেড সার্টিফিকেট নবায়ন সহ নতুন সার্টিফিকেট দিচ্ছেন চেম্বারের সদস্যদের।এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল আমিন চৌধুরী (আরমান) বলেন বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট ক্য শৈ হ্লা কোথায় আছেন সে ব্যাপারে জানি না,তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও করেছি,শুনেছি বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে আছেন।
তিনি বলেন অনেক ব্যবসায়ি তাদের ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধানের জন্য চেম্বার এর ট্রেড সার্টিফিকেট এর জন্য আমার কাছে এসেছে আমি তাদের ট্রেড সার্টিফিকেট দিয়েছি যার টাকা বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এর ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়েছে। চেম্বার অব কমার্স এর ট্রেড সার্টিফিকেট এ প্রেসিডেন্ট এর স্বাক্ষর নিজে দেয়ার বিষয়টি তিনি প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করে বলেন প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে আমাকে কোন ক্ষমতা দেন নি,তবে ট্রেড সার্টিফিকেট নিতে আশা ব্যাবসায়িদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আমি তাদের সার্টিফিকেট দিয়েছি।আপনি বল্লে আর আজ থেকে সার্টিফিকেট দিবো না। তিনি আরো বলেন বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স থেকে তিনি কোন বেতন বা ভাতা গ্রহণ করেন না,তিনি শুধু বান্দরবান পৌরসভার হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা হিসেবে পৌরসভা হতে বেতন নেন।
চেম্বারের সার্টিফিকেট প্রদানে বিভিন্ন অযুহাতে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণের অভিযোগের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।খোঁজ নিয়ে জানাযায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন ব্যবসায়ি ঠিকাদার জানান জেলা সদর সহ নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামা,আলীকদম সহ উপজেলার কয়েকজন ব্যাবসায়িকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জরুরী ভাবে তিনি বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এর ট্রেড সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এর ট্রেড সার্টিফিকেট এর গুরুত্ব এতো বেশি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে জানাযায় সাধারণত বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের বিভিন্ন টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এর এই ট্রেড সার্টিফিকেট প্রদান বাধ্যতামূলক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এবং জেলা পরিষদের যে কোন ঠিকাদারি কাজে চেম্বার অব কমার্স এর সার্টিফিকেট দিতে হবে। বর্তমানে চেম্বারের লাইসেন্স এ প্রেসিডেন্ট এর স্বাক্ষর সেক্রেটারি প্রদান করছে এমন সার্টিফিকেট কিভাবে গ্রহণ করছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান নুরুল আমিন চৌধুরী (আরমান) কোন ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট এর স্বাক্ষর নিজে দিচ্ছেন আমরা জানি না,তবে এ ধরনের সার্টিফিকেট পরবর্তীতে আর গ্রহণ না করার বিষয়ে তিনি প্রতিবেদককে আস্বস্ত করেন।
এ বিষয়ে বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট বান্দরবান জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা কে ফোন করা হলেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।এ বিষয়ে চেম্বার অব কমার্স এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, শফিকুর রহমান বলেন আরমান নিয়মিত চেম্বার অব কমার্স হতে বেতন ও সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন। ঠিকাদারদের একক স্বাক্ষরে ট্রেড সার্টিফিকেট দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না,আমাকে জানানো হয়নি।
প্রেসিডেন্ট এর অবর্তমানে তিনি কোন ভাবেই তার স্বাক্ষর দিতে পারেন না,এটা আইনগতভাবে অন্যায়। এ বিষয়ে বান্দরবান চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালক একেএম জাহাঙ্গীর বলেন উনি পৌরসভার চাকরির পাশাপাশি চেম্বার অব কমার্স এ খণ্ডকালীন কাজ করেন এবং তাকে চেম্বার অব কমার্স হতে প্রতিমাসে সম্মানীও প্রদান করা হয়। বান্দরবান পৌরসভার হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা হয়েও তিনি জেলা চেম্বার অব কমার্স এর সেক্রেটারি সহ আছেন এপেক্স ক্লবের ন্যাশনাল সার্ভিস ডাইরেক্টর হিসেবে,লায়ন্স ক্লাব সহ আরো কয়েকটি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে,বছরে ইউরোপের ৪,৫ টি দেশে তিনি ভ্রমণ করেন এ সকল সংগঠনের পক্ষ হতে।
অনুসন্ধানে উঠে আশে বিগত ২০০৬ সালে বান্দরবান পৌরসভার কর্মচারীদের সাইকেল ক্রয় সংক্রান্ত একটি অনিয়ম তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত একটি পত্রে তাকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও ভৌতিক হাতের ইশারায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।সে সময়ের ১০ই মার্চ ২০০৬ তারিখের জাতীয় পত্রিকা আজকের কাগজ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ, আঞ্চলিক পত্রিকা গিরিদর্পণ সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় তার এই বরখাস্তের খবর টি ছাপানো হয়।দুর্নীতি প্রমান হওয়ার পরেও হয়েছে কয়েক দফা প্রমোশন।
এতো অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারী আচরণের পরেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে।নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে কামিয়েছেন অবৈধ কালো টাকা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক এবং বান্দরবান পৌরসভার প্রধান নির্বাহী জাহিদ ইকবাল বলেন পৌরসভার দায়িত্বপূর্ণ সময়ে উনি অন্য কোন সংস্থার কাজ করার কোন সুযোগ নেই, এ বিষয়ে আমি অবগত নই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো ক্ষতিয়ে দেখা হবে এবং ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।