দেশজুড়ে

‘ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে’ কাঠগড়ায় আসামিকে থাপ্পড়!

  প্রতিনিধি ১৫ নভেম্বর ২০২৩ , ৫:৪৮:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

'ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে' কাঠগড়ায় আসামিকে থাপ্পড়!

লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক নুসরাত জামানের নির্দেশে এজলাসের ভেতর কাঠগড়ায় আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক আসামিকে থাপ্পড় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে আইনজীবীরাও নুসরাত জামানের আদালত বর্জন করেছেন। এসময় তাকে (বিচারক) লক্ষ্মীপুর থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে আইনজীবীরা।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মুকুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ম্যাজিষ্ট্রেট নুসরাত জামান মামলার শুনানির পর মামুন নামে এক আসামিকে এজলাসে ডেকে নেন। পরে পুলিশের এক কনস্টেবলকে ওই আসামিকে দুটি থাপ্পড় দিতে বলেন। ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে কনস্টেবল আসামিকে থাপ্পড় দেন। মামুনও পুলিশের একজন সদস্য। এই ঘটনায় একটি প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে এজলাসের ভেতর থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনাটি নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) আইনগত প্রতিকার পেতে ভূক্তভোগী আবদুল্লা আল মামুন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছেও অভিযোগটি দিয়েছেন।

অভিযোগে আবদুল্লাহ আল মামুন উল্লেখ করেন, স্ত্রী সুমাইয়া সুলতানা বাদী হয়ে মামুনের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট লক্ষ্মীপুর সদর আদালতে একটি মামলা (সিআর ৭৫/২০২৩) দায়ের করেন। মামলাটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৩নং আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য ছিল। বাদীপক্ষ ২ জন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করেন। সাক্ষীর জেরা শেষে মামুন এজলাস থেকে বের হয়ে বারান্দায় যায়। এসময় তাকে বাদী ও তার মা পারুল বেগম মারধর করে। বিষয়টি তিনি আদালতের বিচারক নুসরাত জামানকে জানান। কিন্তু বিচারক একতরফাভাবে কথা না শুনে তাকে এজলাসের কাঠগড়ায় ডেকে নেয়। পরে বিচারক পুলিশ কনস্টেবল কবিরকে নির্দেশ দেয় তাকে দুটি চড় দেয়ার জন্য। বিচারকের নির্দেশে বিচারপ্রার্থী জনগণের সামনেই কনস্টেবল কবির তাকে দুটি চড় দেয়। এসময় তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়।

বিচারক তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে চড় দিয়েছি, এখন আমি নিজে তোকে চড় মারবো’। পরে আদালত পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করলে মামুনকে কোর্ট কাষ্টডিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

আইনজীবী আবদুর রহিম রাজু বলেন, আদালতের এজলাসে ম্যাজিষ্ট্রেট নুসরাত জামান কনস্টেবলকে দিয়ে আসামিকে থাপ্পড় দিয়েছেন। এটি আইন বহির্ভূত ঘটনা। এ ঘটনায় আইনজীবী সমিতি সাধারন সভা করেছেন। বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সঙ্গে সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বসবেন। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে- নুসরাত জামানের আদালতে কোন আইনজীবী যাবেন না। তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। 

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ বলেন, ঘটনাটি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে সভা করেছি। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত নিলে জানানো হবে।

লক্ষ্মীপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমরান হোসেন ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, লিখিত অভিযোগের ঘটনাটি আমার জানা নেই। আমি বাহিরে আছি। এ বিষয়ে এখন বিস্তারিত বলতে পারবো না।

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌশুলী অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন বলেন, এজলাসে এধরণের কাজ বিচারক করতে পারেন না। এটি খুবই ন্যাক্কারজনক।

Powered by