রাজশাহী

রাজশাহীতে এবার দেড় হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যে

  প্রতিনিধি ৬ জুন ২০২৩ , ৬:৪৪:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ


রফিকুল হাসান ফিরোজ, রাজশাহী ব্যুরো :

রাজশাহীতে এবার দেড় হাজার কোটি টাকার আমের বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গতবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০১ কোটি টাকা। কিন্তু বিক্রি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তারা বলছে, এর আগে সাধারণত এক মৌসুমে আমের ব্যবসা ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকলেও গতবছর ১ হাজার কোটি টাকার মতো আমের বাণিজ্য হয়। যা এবার দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। এ বছর চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে।
অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে এবার আমের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। জেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। এসব আমের বাজার হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। এবার শুরুতেই বিদেশে আম রপ্তানি হচ্ছে।
গত ৪ মে থেকে রাজশাহীতে গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাত প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় আম বাজারজাত করণের ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪ এপ্রিল থেকে গুটি আম বাজারজাত করা হচ্ছে। গোপালভোগ ১৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা ও রানি পছন্দ ২০ মে, হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত ২৫ মে, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ১০ জুন আম্রপালি বাজারজাত করা যাবে।

এছাড়া, আশ্বিনা ও বারি আম-৪, গৌড়মতি আম ১০ জুলাই থেকে, ইলামতি আম ২০ আগস্ট থেকে বাজারজাত শুরু হবে। আর কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই বাজারজাত করা যাবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এবারও সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে তারিখ ঠিক করা হয়েছে। এর আগে যদি কোনো মালিকের আম পেকে যায়, তাহলে তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আম বাজারজাত করতে পারবেন।
চলতি মৌসুমে রাজশাহীর আমের প্রথম দিন থেকে আমের চালান হংকং, ইতালি ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। এরইমধ্যে প্যাকেজিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, এবার শুরুতেই ইতালিতে আম রপ্তানি করা হচ্ছে। বাঘা থেকে আমগুলো ইতালিতে যাবে। এগুলো স্থানীয় জাতের চোষা আম। প্রথমে ৩০০ কেজি আম যাবে। ঢাকার আদব ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে এসব আম যাবে।
বাঘার আমবাগান ও সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ছানার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আম নামানের প্রথম দিন ইতালি ও হংকেংএ আম পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েটি দেশে আম পাঠানো হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা মোজদার হোসেন বলেন, এবার শুরুতেই বিদেশে আম রপ্তানি হচ্ছে। শুরুতেই গুটি জাতের আম বাঘা থেকে ইতালিতে পাঠানো হয়েছে। এরপর অন্যান্য জাতের আম পাঠানো শুরু হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমের জন্য একটি কন্ট্রোল সেল করা হয়েছে। এখানে যেকোনো সমস্যা বা অভিযোগ জানানো যাবে। যারা অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন, তারা কোনো সমস্যায় পড়লে আমরা সহযোগিতা করব। জেলার কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকেও কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন বেশিদিন ধরে চালানো ও বগি বাড়ানোর আবেদন করা হবে।

Powered by