ঢাকা

রূপগঞ্জের সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের পরিত্যক্ত ছাত্রাবাস এখন মাদকসেবিদের আখড়া

  প্রতিনিধি ১১ মে ২০২৩ , ৬:৩২:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ শাহিন, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসটি এখন মাদকের আস্তানা। কলেজটি কালের বিবর্তনে বেহাল দশায় পরিণত। একসময় দূরদুরান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের নানা জটিলতায় এখন তার করুণ পরিণতি। অভিযোগ রয়েছে, গত প্রায় দেড় যুগ ধরে ছাত্রাবাসটি বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। যত্ন আর সংরক্ষনে অবহেলার কারণে তৎকালীন জমিদারদের (বর্তমানে ছাত্রাবাস) ভবনটি জীর্ণদশায় রূপ নিয়েছে। খসে পড়ছে পলেস্তরা। রাতে-দিনে বসে মাদকসেবীদের আসর।
কলেজ সূত্র জানায় , ১৮৮৬ সালে তৎকালীন রামরতন ব্যাণার্জী মুড়াপাড়ায় জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। জমিদার বাড়ির পাশেই পাইক-পেয়াদের থাকার জন্য আলাদাভাবে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন। জমিদাররা দেশ ছেড়ে চলে গেলে ১৯৬৬ সালে জমিদার বাড়িটি মুড়াপাড়া কলেজের কার্যক্রম শুরু করে। তৎকালীন সময়ে সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় একমাত্র কলেজ থাকায় শিক্ষার্থীরা এ কলেজে লেখাপড়া করতো। দূরদুরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে ঐ সময়ের কলেজ কর্তৃপক্ষ জমিদারদের পাইক-পেয়াদের ভবনটিতে ছাত্রদের আবাসিক হল হিসাবে ব্যবহার করার অনুমতি দেন।
মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় আরো নতুন কলেজ হওয়ার কারণে মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরদুরান্তের ছাত্র কমে গেছে। তবে এখনো অনেক ছাত্র দূরদুরান্ত থেকে আসে। ছাত্রাবাস না থাকায় তারা কষ্ট করেই প্রতিদিন আসা যাওয়া করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছাত্রাবাসে দূর-দুরান্ত হতে আসা ছাত্ররা স্থানীয় ছাত্রদের অত্যাচারে কারণে ছাত্রাবাসে থাকেনি। দিনে বখাটেদের আনাগোনা। আর রাতে চলে মদ,গাঁজা, ইয়াবা ও ফেন্সিডিল সেবনসহ মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীদের নানা অপকর্ম।
স্থানীয়রা জানান, ভবনের দরজা-জানালা কিছুই নেই। সবকিছু খুলে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। চুরি হচ্ছে ভবনের ইট-পাথরও। একসময়কার ছাত্রাবাসটি এখন ভূতুড়ে বাড়ি ও মাদকের আস্তানায় পরিণত হয়েছ। স্থানীয় বখাটেদের ছত্রছায়ায় চলে এসব অপকর্ম।  বেড়েছে মাদকসেবি ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত। কলেজ প্রাঙ্গনে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাইট না থাকায় সন্ধ্যার পর পর এখানে নেমে আসে  ঘন কালো অন্ধকার। আর ওই সময়ই ছিনতাইকারীরা কলেজের সামনের আম বাগানে নিজেদের দল নিয়ে ছোট ছোট ছুরি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তৈরি থাকে। পরে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপকর্ম ঘটায় তারা। এতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি তথা সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের সুনাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, ১৯৯৮ সালে যখন আমি এই কলেজের ছাত্র ছিলাম তখন এই ছাত্রাবাসটি জমজমাট ছিলো। তখন উপজেলার আশপাশের থানার ছাত্ররা দুর হওয়াতে এখানে থাকতো। পরে যার যার এলাকায় কলেজ নির্মাণ হওয়ার কারনে এই ছাত্রাবাসটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। যার কারণেই এখানে এখন এসব অপকর্ম হচ্ছে।
এসএম শাহাদাত নামের আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যখন মুড়াপাড়া কলেজের ছাত্র ছিলাম যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে দুরদুরান্তের ছাত্ররা কলেজে এসে সঠিক সময়ে ক্লাস করতে পারেনি। তাই অনেক ছাত্র এ ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করতো। বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে তাতে অপরাধ সংগঠনিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ নজর দিলে ছাত্রাবাসটি আগের মতো ব্যবহার উপযোগী হতে পারে।
সরকারি মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি সাইফুল ইসলাম তুহিন বলেন, ছাত্রাবাসটি কলেজের নামে লীজ নেয়া। এছাড়া পুরাতন ভবন হওয়াতে সরকারের অনুমোদন ছাড়া আমরা হাত দিতে পারছিনা। এছাড়া শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আমার কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা কিছু দিন পর পর ছাত্রাবাসটি পরিষ্কার করে থাকি। মাদক ও জুয়ারীদের আনাগোনা বাড়লে আমার তাদের ধাওয়াও দিয়ে থাকি। এখন এসব অপকর্ম অনেকটা কমে গেছে। তবে খুব শীঘ্রই ছাত্রাবাসটি নতুন ভাবে নির্মাণ করে ব্যবহার উপযোগী করা হবে।
সরকারি মুড়াপাড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, কলেজটি সরকারীকরণ হলেও এখনও কাগজপত্রে সম্পূর্ণ হতে পক্রিয়ার বাকি রয়েছে। আর পুরোপুরি সম্পন্ন হলে এই ছাত্রাবাসটি সংস্কার করে ব্যবহার উপযুগী করতে সরকারের বরাবর আবেদন করা হবে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, পূর্বে চুরি ও ছিনতাইয়ের অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে মাদকের যে বিষয়টি তা আমাদের জানা হয়নি। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক সেবন,  মাদক ব্যবসা ও চুরি-ছিনতাই করা একটা বিশাল অপরাধ। কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে খুব শীঘ্রই অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল হক বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে কলেজ ম্যানেজম্যান্টের সাথে কথা বলে কি কি সমস্যা রয়েছে সে ব্যপারে উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া মাদক ও জুয়ার বিষয়টি রয়েছে তা তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content