মো. শাহিন ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৪:৫৩:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূলতা গাউছিয়া এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ১১ বছর যাবৎ অবৈধ দোকান বসিয়ে দখলে রেখেছে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। মঝে মাঝে প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও কোন কাজে আসেনি। বরং ফুটপাত ব্যবসায়ীরা দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয়দিকে দীর্ঘ যানঝটের সৃষ্টি হয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দুরপাল্লার যাত্রীরা। সাথে দূর্ঘটনাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এজন্য প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা গাউছিয়া এলাকায় এক সময় যানঝট লেগেই থাকত। প্রতিদিনই ঘন্টার পর ঘন্টা যানঝটের শিকার হতো দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হতো যাত্রী ও পথচারীদের। তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গাউছিয়ার যানঝট নিরসনে সাড়ে ৩’শ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূলতা ফ্লাইওভার নির্মান করে। মহাসড়কটি ৪ লেন থেকে ৮ লেনে উন্নীত করে। এতেও যানঝট কমছেনা। অধিকাংশ গাড়ী ফ্লাইওভার ব্যবহার না করে নীচ দিয়ে চলাচল করে। এদিকে ৮ লেনের ঢাকা- সিলেট মহাসড়কের উভয়দিকে ৬ লেন দখলে নিয়েছে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। এতে গণপরিবহন চলাচল ব্যহত হয়ে যেমন যানঝট বাড়ছে তেমনি বাড়ছে জন-ভোগান্তি। তাছাড়া ফুটপাত ব্যবসায়ীরা ফল ও তরিতরকারীর উচ্ছৃষ্ট অংশ ফ্লাইওভারের পিলারের গোড়ায় ফেলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করছে। পচাঁ ময়লার দূর্গন্ধ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এতে দুষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কারনে পথচারীরাও রাস্তা পারাপার হতে পারছেনা। এজন্য এখনে দূর্ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ মহাসড়ক দখল করে ফুটপাত বসিয়ে চাঁদা আদায় করত। এখানে প্রায় ৪ শতাধিক দোকান থেকে দৈনিক আড়াই লাখ টাকা চাঁদা আদায় হতো। এত বিপুল পরিমান টাকা রূপগঞ্জ থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা হতো। এ চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে গত তিন বছর আগে যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন নামের এক চাঁদাবাজকে দিনের আলোতে কুপিয়ে হত্যা করে দুবৃত্তরা। দখল বানিজ্য নিয়ে চলত ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। তখন এক আতংকের নাম ছিল গাউছিয়া। বৈসম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন ফুটপাতে চাঁদাবাজি না থাকলেও ফুটপতকে কেন্দ্র করে জনমনে বাড়ছে আতংক।
উপজেলা প্রশাসন ফুটপাত উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করলেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে। গত বছর ফুটপাতের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ফুটপাত ব্যবসায়ী ও পুলিশ কর্তৃক ভুলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আরিফ ভুইয়াকে নাজেহাল হতে হয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে।
এ ব্যপারে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, ফুটপাত এখন আমাদের এলাকার বিষ ফোঁড়া। মহাসড়ক দখল করে এভাবে ফুটপাত বসিয়ে এলাকায় বিশৃংখলার সৃষ্টি করছে। শীঘ্রই উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যপারে হাইওয়ে পুলিশের ওসি আলী আশরাফ জানান, আমরা এখন পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ফুটপাত উচ্ছেদের লক্ষ্যে মাইকিং করা হয়েছে। শীঘ্রই ফুটপাত উচ্ছেদে বড় রকম অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান আলী আশরাফ।