চট্টগ্রাম

লক্ষ্মীপুরের লোকসঙ্গীত শিল্পী হায়দার আলী আর নেই

  প্রতিনিধি ২৮ জুলাই ২০২১ , ৭:৫৩:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

১৯৬০ এর দশকের কিংবদন্তি লোকসঙ্গীত সাধক শিল্পী হায়দার আলী বয়াতি আর নেই। বুধবার ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার গাইয়ার চর গ্রামের নিজ বাড়িতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না-লিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮৫ বছর। তিনি স্ত্রী, মেয়ে ও তিন নাতিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান। দীর্ঘদিন ধরে হার্ট ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। তাঁর মৃত্যুতে জেলা ও জেলার বাইরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
জানা যায়,
হায়দার আলী বয়াতি রায়পুর উপজেলার গায়ার চর গ্রামে ৫ জুলাই ১৯৩৭ সালে কৃষক ছেলামত উল্লাহ পাটোয়ারী ও জেন্নাতুর নেছা দম্পতির ঘরে জম্ম লাভ করেন। তার শৈশব কাটে সবুজ শ্যামলে ঘেরা গায়ারচর গ্রামে। লেখা পড়ার প্রতি তেমন আগ্রহ না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা ও পুরো সম্পন্ন করতে পারেনি তিনি।

তবে শৈশব থেকে গান বাজনার প্রতি ঝোক ছিল তার, কন্ঠ ছিল প্রকট সুমুধুর, যা আকৃষ্ট করত অন্যদের। এছাড়া যে কোন গান একবার শুনলেই হুবুহু গাইতে পারতেন। তৎকালীন বাড়ীর পাশে হিন্দু বাড়ীতে অনুষ্ঠিত পালা গান, যাত্রাগান শোনার জন্য বাড়ী থেকে পালিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এসে শিল্পীদের কন্ঠের ভাবগীতি অনুধাবন করতেন। অনেক সময় সুরের মূর্চ্ছনায় বিভোর হযে থাকতেন তিনি। তাই যেখানেই অনুষ্ঠানের কথা শুনতেন দূর-দূরান্তের পথ হলেও পায়ে হেটে ওই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে চলে যেতেন তিনি।

একপর্যায়ে এই সুর-সংগীতের মোহে মাত্র ১১ বছর বয়সে এলাকায় অনুষ্ঠিত এক কবিগানের আসরে জনৈক প্রবীন কবিয়ালের সাথে ভাব জমিয়ে ওই দলের সাথে যুক্ত হয়ে বাড়ী ছাড়েন।
রপ্ত করেন জারি গান, সারি গান, মারফতি, শরিয়ত, মন:শিক্ষা, মিলনতত্ব, রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলী, পালাগান ও কবিগান।

দীর্ঘ ২৩ বছর পর শিকড়ের টানে বাড়ী আসেন, দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ থাকায় বাড়ি আসার সাথেই স্বজনরা তাঁকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করান। এতে বাউন্ডুলে জীবনের অবসান হলেও তিনি তাঁর নিত্য সুর-সাধন থেকে সরে আসেননি। ৬০এর দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর ২০১৬ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা, বরিশাল এবং ফরিদপুরের প্রতিটি শহর গ্রামীন জনপদে এসবব গানের লড়াই অব্যাহত রাখেন। তার গানে হাজার শ্রোতা ও ভক্তের মন জয় করেন। এতে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন হয় তার।
এদিকে বয়াতি হায়দার ২০১৫-১৬ সালে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক সম্মানসূচক পুরস্কার অর্জন করেন। দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ’ থাকার পর এ দিন তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে দূর দূরান্ত থেকে তার বাড়ীতে ভিড় জমান তার অসংখ্য ভক্তরা।

এদিকে এ শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন লক্ষ্মীপুর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সভাপতি জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদসহ আনেকে।

আরও খবর

Sponsered content