প্রতিনিধি ২৬ জুলাই ২০২১ , ৪:৪১:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানান পদক্ষেপ নিয়ে মাঠে নেমেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
বিগত কয়েক বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের পর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নানা প্রকল্প, উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী এ বছরও দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধন কাজে কিছুটা গুরুত্ব দিয়েছে। বাড়িয়েছে এই খাতের বরাদ্দও। এরপরও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
ডেঙ্গু বাড়ায় শঙ্কিত নগরবাসী বলছে, এই করোনার মধ্যেও ডেঙ্গু প্রকোপ আকার ধারণ করছে। সিটি করপোরেশনের উচিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরও ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা মোর্শেদ আহমেদ তুর্জ বলেন, একদিকে করোনার ভয় আর অন্যদিকে যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গু। হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সিটি করপোরেশনের উচিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু আমরা মশক নিধন কর্মীদের দেখাই পাই না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের কথা কেবল টিভিতে, খবরে শুনতে পাই। বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা নিয়ে নগরবাসী খুবই শঙ্কিত।
শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মহিবুর রহমান বলেন, বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। ডেঙ্গুর ভয়ে সারাদিন ঘরে মশারি টাঙিয়ে রাখি। শহরজুড়ে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু আতংকে মানুষের মাঝে ভয় সৃষ্টি হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কাছে আমাদের অনুরোধ, যেন তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নগরবাসীকে এর ভয়াবহতা থেকে নিরাপদে রাখুক।
এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বলছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারা সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত ১১ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত এডিস মশা নিধনে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
চিরুনি অভিযানের ৯ দিনের তথ্য জানিয়েছে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাশার মোহম্মদ তাজুল ইসলাম। তার দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই কয়দিনে মোট ৫৪টি ওয়ার্ডের ৮৮ হাজার ৬১৬টি স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়। এ সময় মোট ৫৮২টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি মোট ৬৫ হাজার ২৬২ স্থাপনায় লার্ভিসাইড স্প্রে করেছে মশক নিধন কর্মীরা। এ সময় নিয়মিত ১২টি এবং মোবাইল কোর্টে মোট ৮৯টি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
অন্যদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গতকালও এমন অভিযান পরিচালনা করেছে সংস্থাটি। ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানিয়েছেন, রোববার (২৫ জুলাই) এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠান সাউথ ব্রিজ হাউজিং লিমিটেডসহ ১০টি নির্মাণাধীন ভবনের মালিককে ২ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে তিন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এমন অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে।
অভিযান প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো বলেন, ২৫ জুলাইয়ের অভিযানে তিনটি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করেছি। এছাড়াও ১০টি বাড়িতে ডেঙ্গুর প্রজনন উপযোগী পরিবেশ বিরাজমান থাকায় তাদের আগামী ১-৩ দিনের মধ্যে পরিবেশের উন্নতির জন্য সতর্ক করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ জরিমানা করা হবে। আমাদের অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে।
ডেঙ্গুর হটস্পট রাজধানীর ১৭ স্থান
ঢাকার ১৭টি স্থানকে ডেঙ্গুর হটস্পট বিবেচনা করে আজ সোমবার থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধ ছিটানোর জন্য দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
গতকাল রোববার (২৫ জুলাই) সচিবালয়ে ডেঙ্গু ইস্যু নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন।
দুই মেয়রকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, রামপুরা, মহাখালী, মগবাজার, সিদ্ধেশ্বরী, শান্তিনগর, ক্যান্টনমেন্ট, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, পল্টন, খিলগাঁও, মিরপুর, বসুন্ধরা, মুগদা, বাসাবো, সবুজবাগ, বাড্ডা ও মোহাম্মদপুর- এ এলাকাগুলোকে হটস্পট হিসেবে বিবেচনা করে সোমবার থেকে তাৎক্ষণিক মশা নিধনের ওষুধ দেবেন।
ডেঙ্গু চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণ
এদিকে করোনা ও ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা একই হাসপাতালে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রোববার (২৫ জুলাই) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টারে নির্মাণাধীন ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১২০০ রোগী এরই মধ্যে ভর্তি হয়েছে। আমাদের নন কোভিড রোগীর চিকিৎসা, করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, টেস্ট ও ভ্যাকসিন— সব একসঙ্গে করতে হচ্ছে। আমরা আজ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল চিহ্নিত করেছি, যেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা হয়, সেখানে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।
হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা
রোববার (২৫ জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় (এক দিন) আরও ১০৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ১০২ জন এবং ঢাকার বাইরে নতুন তিন জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬০ জনে।
এদের মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৫৪ জন এবং অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগী ছয় জন।