বাংলাদেশ

শুরু হলো মাথা গুণে জনশুমারি

  প্রতিনিধি ১৫ জুন ২০২২ , ৮:২৩:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

১৪ জুন দিবাগত মধ্যরাত বা শূন্য মুহূর্ত থেকে ভাসমান নাগরিকদের গণনার মধ্য দিয়ে সারা দেশে শুরু হয়েছে ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম। রাজধানীর কাওরানবাজারের মতো যেসব এলাকায় বেশি সংখ্যক ভাসমান জনগণের বসবাস, সেসব এলাকায় এই বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। 

আজ ১৫ জুন (বুধবার) থেকে ২১ জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এই শুমারি কাজের জন্য কেনা হয়েছে চার লাখ ট্যাব। এসবই তথ্য সংগ্রহে ব্যবহার করা হবে।

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি দেশ বা সীমানাবেষ্টিত অঞ্চলের সব ব্যক্তির জনতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও প্রকাশের সার্বিক প্রক্রিয়াই হলো জনশুমারি। কেউ যেন এই গণনা থেকে বাদ না পরে এবং কেউ যেন আবার দুবার গণনায় যুক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে বলে জানান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।

২০২১ সালের মধ্যেই শুমারি শুরুর আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। এজন্য প্রথমে গত বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি জনশুমারি করার কথা ছিল, যা করোনার কারণে পিছিয়ে যায়। পরে ২৫ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর করার সিদ্ধান্ত হয়। ট্যাব জটিলতায় তা শুরু করা যায়নি। পরে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর শুমারি সপ্তাহ ধরে জনগণনা করার কথা ছিল, কিন্তু তাও সম্ভব হয়নি।

প্রবাসীদের মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করেন। তাদের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। সৌদি আরব ছাড়াও আরব বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশে  যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার ও বাহরাইনে প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস। এসব প্রবাসীদের গণনা করা হবে। একইভাবে বাংলাদেশেও নানা প্রকল্পে ভারত, চায়না, জাপানসহ নানা দেশের নাগরিক কর্মরত। এসব নাগরিকদেরও গণনার আওতায় আনা হবে।

এবার এই শুমারিতে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন গণনাকারী, ৬৩ হাজার ৫৪৮জন সুপারভাইজার, ৩ হাজার ৭৭৯জন তথ্য প্রযুক্তি সুপারভাইজার, জোনাল অফিসার ৩ হাজার ৭৭৯জন, জেলা শুমারি সমন্বয়কারী ১৬৩জন এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ১২জন দায়িত্ব পালন করছেন।

এক নজরে জনশুমারি

আইন অনুযায়ী প্রতি ১০ বছর পরপর দেশের প্রতিটি মানুষকে গণনার আওতায় আনতে হবে। এজন্য ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১’ শীর্ষক প্রকল্প ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পায়। তবে করোনাভাইরাস মহামারির এটি কারণে এক বছর পিছিয়ে যায়। শুরুতে এ খাতে মোট ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। পরে প্রকল্পের সংশোধনীতে ব্যয় কিছুটা কমে দাড়ায় এক হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পে ট্যাব (ট্যাবলেট পিসি) সরবরাহ করেছে বাংলাদেশি প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ৪৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭০ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব। ইতোমধ্যে এগুলো সরবরাহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ বছর পরপর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়। এবারই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি কার্যক্রম পরিচালিত হতে যাচ্ছে।

একটি ওয়েবভিত্তিক ইনটিগ্রেটেড সেনসাস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইসিএমএস) প্রস্তুতসহ জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমে (জিআইএস) গণনা এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের কন্ট্রোল ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে, তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল সাত কোটি ১৫ লাখ। দ্বিতীয় আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয় ১৯৮১ সালে; তখন জনসংখ্যা ছিল আট কোটি ৯৯ লাখ। ১০ বছর পরপর দেশে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা যথাক্রমে ১৯৯১, ২০০১, ও ২০১১ সালে হয়। ওই তিন গণনায় দেশের মোট জনসংখ্যা পাওয়া যায় যথাক্রমে ১১ কোটি ১৫ লাখ, ১৩ কোটি ৫ লাখ এবং ১৪ কোটি ৯৮ লাখ।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, জনশুমারির মাধ্যমে দেশের তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। আগামী পরিকল্পনা নেয়ার জন্য এই শুমারি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ শুমারিতে কোনো ব্যক্তিই দ্বিতীয়বার গণনায় আসবে না। তবে কেউ বাদও পড়বে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রতি ১০ বছরে গড়ে প্রায় দুই কোটি করে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আর মো. দিলদার হোসেন বলেন, তথ্য সংগ্রহের ফরমে ৪৫টি প্রশ্ন থাকবে যা পূরণ করতে ২২-২৫ মিনিটের মতো সময় লাগবে গণনাকারীর। তাছাড়া ট্যাবে শুমারির তথ্য ছাড়া অন্য কোনো কাজ করা যাবে না। ফলে আমাদের এসব ট্যাবে কোনো সমস্যা হবে না। জনশুমারির প্রিলিমিনারি প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে দেয়া হবে। শুমারির মোট ১৩৩টি প্রতিবেদন থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব মূল প্রতিবেদন দেয়া হবে।

তিনি বলেন, জনশুমারিতে প্রধান ৩৫টি প্রশ্ন থাকবে, এর পাশাপাশি আরো ১০টি তথ্য নেয়া হবে। ফলে জনশুমারিতে মোট ৪৫টি তথ্য নেয়া হবে। জনশুমারির ওপর যে কোনো দেশের সঠিক পরিকল্পনা নির্ভর করে। তাই বলবো ‘জনশুমারিতে তথ্য দিন, পরিকল্পিত উন্নয়নে অংশ নিন’। আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন দেশব্যাপী জনশুমারি হবে। শুমারি শুরুর আগে ১৪ জুন রাত ১২টাকে শুমারি রেফারেন্স পয়েন্ট/সময় হিসেবে ধার্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যদি কোনো কারণে কেউ গণনা থেকে বাদ পড়েন তাহলে ২১ জুনের পর তিনি যোগাযোগ করলেই তাকে ও তার তথ্য যুক্ত করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by