ঢাকা

শ্রীপুরে কোরআনে বর্ণিত ত্বীন ফলের চাষ

  প্রতিনিধি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৭:১৯:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

এমদাদুল হক, শ্রীপুর (গাজীপুর) : গাজীপুরের শ্রীপুরে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মরুভূমির ফল ত্বীন চাষ হচ্ছে। বাগানটি গড়ে উঠেছে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বারতোপা গ্রামে। রসে ভরপুর মিষ্টি ও সুস্বাদু এই ফল বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে জন্ম নিচ্ছে ত্বীন গাছ। এ দেশের তাপমাত্রায়ও ত্বীন চাষের উপযোগী। সরেজমিনে জানা যায়, ঢাকার আজম তালুকদার নামে এক যুবক শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের দক্ষিণ বারতোপা গ্রামে সাড়ে তিন একর জমির উপর মডার্ণ এগ্রো ফার্ম এন্ড নিউট্রিশন নামে কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। এ খামারে চাষ করেছেন মিসর থেকে আনা বিশ্বের বৃহৎ এবং পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মরুভূমির ত্বীন ফলের। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি মিশ্র ফলের বাগান ্ও শোভাবর্ধন করছে এ খামারের। এই বাগানটি দর্শনার্থীদের জন্য উনমুক্ত রয়েছে। চাইলেই যে কেও ঘুরে দেখতে পারেন। ত্বীন ফলের চারা আনার সময় এটির ফলন হবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয়ে ছিলেন আজম তালুকদার। পরে ত্বীনগাছে ফল ধরতে দেখে কিছুটা অবাক হন। বাগানে ত্বীনের ফলন দেখে এখন তার মুখে স্বস্তির হাসি। আজম তালুকদার তার বাগানের ত্বীন ফল নিয়ে ইউটিওবে ভিডিওর মাধ্যমে অনেক বেকার যুবকদের এই চাষাবাদের জন্য আহব্বান জানান, তিনি বলেন কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই, মাটিতে জৈব ও কমপোজড সার মিশিয়ে রোদে টবে লাগিয়েছেন কয়েক প্রজাতির ত্বীনগাছ। সবুজ লকলকে প্রসারিত শ্যামল পাতার গাছগুলো লম্বায় ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত। বর্ষা ও শীতে ফল কম হলেও বছরের অন্যান্য সময়ে প্রতিটি পাতার গোড়ায় জন্মে একটি করে ফল। এছাড়া খামারটিতে শোভা পাচ্ছে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ফল জয়তুন সহ কমলালেবু, সুইট লেমন, সাদা জাম, লাল জামরুল, লাল আতা, বারোমাসি আমড়া, মালবেরি, স্ট্রবেরি, লাল আতা, বিদেশি জাতের পেয়ারা ও নানান জাতের লেবু। বাগানে এসব দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই আছে। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ডুমুর আকৃতির ত্বীন ফল সবার দৃষ্টি কেড়েছে। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ত্বীন ফল পাকতে শুরু করে। পাকলে লাল, খয়েরি, গোলাপি ও হলুদাভ রঙ ধারণ করে এ ফল। ফলের আকারও বড় হয়। পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও মিষ্টি হয়ে ওঠে। সৌখিন এই ফলচাষী স্মার্ট কৃষক আজম তালুকদার জানান, দেশের মাটিতে ত্বীন চাষ কৃষকের কর্ম সংস্থানের ডাক দিয়েছে। এদেশের কৃষকের মুখে হাসি ফুটাতে উদ্ভাবনী চেতনায় দেশের সর্ব প্রথম ত্বীন ফল বাণিজ্যিক চাষ নিয়ে আসেন। একজন কৃষক তখনই লাভবান হয় যখন উৎপাদিত পন্যটি উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়। ত্বীন শুধু উচ্চ মূল্যের ফলই নয় উচ্চ ফলনশীলও বটে। এটি এক মাত্র ফল যা অতি দ্রæত সময়ে সল্প জায়গায়, সল্প শ্রমে চাষ করা সম্ভব। ত্বীন ফল একই সাথে উচ্চ ফলন ্ও উচ্চ মূল্যের। দেশের অন্য ফলে একই সাথে এই ৫টি সুবিধা বজায় থাকে না। সেই সাথে পবিত্র কোরআনের বর্ণিত, আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত এই ত্বীন ফল, যা দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণে অন্য ফলের তুলনায় বহুগুন বেশী। সুমিষ্ট এই ফল দেশ ও বিদেশের বাজারে চাহিদা রয়েছে। দেশের থেকেও কয়েকগুন বেশী চাহিদা বিদেশের বাজারে। ফলে বাণ্যিজিক ভাবে দেশের টাকার পাশা-পাশি বৈদেশীক মুদ্রা অর্জনেরও বড় সুযোগ রয়েছে ত্বীন চাষীদের । সৌদি আরব ও বাংলাদেশ এই ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত।
আজম তালুকদার বলেন পবিত্র কোরআন শরিফে ত্বীন ও জয়তুন ফলের কথা উল্লেখ আছে। বিষয়টি জেনে ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠি। ঢাকায় যোগাযোগ করে জানতে পারি বাংলাদেশেও ত্বীন ফল চাষ করা সম্ভব। পরে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে মিসর থেকে নিয়ে আসি কয়েকটি ত্বীন চারা। এখন আমার নার্সারিতে ৮-১০ প্রজাতির ত্বীনগাছ রয়েছে। স্বাভাবিক পরিচর্যার মাধ্যমে ত্বীন বড় হয়ে ওঠে। বেশি পানি ব্যবহার করতে হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এই ফল খুবই উপকারী। এ ছাড়া নানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। এতে আছে প্রচুর পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। পুষ্টি চাহিদা পূরণেও ত্বীন গুরুত্বপূর্ণ। ত্বীন ফল বাংলাদেশে ড্রাই ফুড হিসাবে আমদানি করা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে তা সহায়ক হতে পারে। ত্বীন ফল চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্পসারন অফিসার সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ত্বীন একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল, যা মরু অঞ্চলে স্বাচ্ছন্দ্যে জন্মায়। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন। এই ফল চাষে আরও যারা এগিয়ে আসবে কৃষি বিভাগ তাদের সব ধরনের সহায়তা দেবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by