দেশজুড়ে

সমলয় চাষাবাদে দিন বদলের পথে পাহাড়ের কৃষি

  প্রতিনিধি ৮ জানুয়ারি ২০২৫ , ৪:২০:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

সমলয় চাষাবাদে দিন বদলের পথে পাহাড়ের কৃষি

সময়ের সাথে সাথে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন,কৃষকদের শ্রম ও সময়ের সঠিক ব্যাবহারের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের কৃষি ব্যবস্থা।ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় চাষাবাদের ক্ষেত্রে ব্যাবহৃত হচ্ছে উন্নত কৃষি ব্যাবস্থাপনার সাথে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি।

সবুজ মাঠে সারিবদ্ধ ভাবে ট্রেতে সাজানো ধানের কচি চারা,দেখতে অনেকটা সবুজ কার্পেটের মতো মনে মনে হলেও আসলে তা নয়।থরে থরে সাজানো ট্রেতে লাগানো ধানের বীজতলা ১০-১৫ দিনের মধ্যে জমিতে রোপনের উপযুক্ত হয়ে উঠে।বীজতলা হতে পরিবহনের মাধ্যমে সেই চারা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জমিতে রোপনের জন্য।কৃষকরা সেই চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে জমিতে রোপণ করছেন।

সময়ের সাথে কৃষি প্রযুক্তির হাওয়া লেগেছে পাহাড়েও।বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের,উদালবনিয়া এলাকার ৫০-৬০ জন পাহাড়ি কৃষক তাদের জমিতে চাষাবাদের জন্য গ্রহণ করেছেন , জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর বাস্তবায়নে ২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি পূর্নবাসন সহায়তা খাত হতে রবি মৌসুমে বোরো ধানের “সমলয় চাষাবাদের” পদ্ধতি।

এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে এই এলাকার কৃষকরা স্বপ্ন দেখছেন দিন বদলের।

উশৈসিং মারমা পিন্টু ,চট্টগ্রাম পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হতে এম.বি.এ শেষ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে আত্মকর্মসংস্থানের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন কৃষিকে। উদালবনিয়া এলাকায় অন্য কৃষকদের সাথে নিজের ৩ একর জমি যুক্ত করে সমলয় চাষাবাদে এগিয়ে এসেছেন।

তিনি জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও সিমিট এর উদ্যোগে সমলয় চাষাবাদের এই উদ্যোগে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি,আমার ৩ একর জমি, বর্তমানে জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে  শ্রমিক স্বল্পতার কারনে সমলয় চাষাবাদের মাধ্যমে মেশিনের মাধ্যমে জমিতে ধানের চারা রোপন করায় এতে শ্রমিক খরচ ও সময় সাশ্রয় হয়,এতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে।

আরেকজন কৃষক জানান আগে জমিতে চাষাবাদের জন্য শ্রমিক নিতে সময় ও খরচ বেশি লাগতো।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সরকারি ভাবে ধানের বীজ, সার দিয়েছে,এখন মেশিনের মাধ্যমে এক ঘন্টায় ১ কানি জমিতে একজন শ্রমিক চারা রোপন করে দিচ্ছে এতে সব দিক দিয়ে আমরা খুশি।

কম সময়ে নিজের জমিতে ধানের চারা রোপন করতে পারায় খুশি একই এলাকার সমলয় চাষাবাদে ৫০ একর জমিতে যুক্ত হওয়া অন্য কৃষকরা।

গত ৭ই জানুয়ারি বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উদালবনিয়া এলাকার ৫০-৬০ জন কৃষকের ৬০ একর জমিতে সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদের কর্মসূচি “সমলয় চাষাবাদ” উদ্বোধন করেন।

এ সময় “সমলয় চাষাবাদে” প্রায় ৬০ জন কৃষককে মাঠ পর্যায়ে বীজতলা তৈরী সহ জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে ধানের চারা রোপনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়।

এ বিষয়ে বান্দরবান  জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এম এম শাহ নেওয়াজ বলেন কৃষি পূর্নবাসনের আওতায় দুইটি ব্লক প্রদর্শনী পেয়েছি,এরই ধারাবাহিকতায় সদর উপজেলা এবং আলীকদম উপজেলায় সমবায় ভিত্তিক সমলয় চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।এ এলাকায় ৫০ জন কৃষকের ৫০-৭০ একর জমি আছে।সরকারের উদ্দেশ্য কৃষকদের সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদের চর্চা করানোর মাধ্যমে কৃষকদের দলিয় ভাবে কাজ করার মনোভাব তৈরী করা।

প্রথম পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান ৯২ ধানের চারা কৃষকদের মাঝে প্রদান করা হয়েছে,এ জন্য ৪৫০০ ট্রে তে ধানের বীজতলা তৈরী করা হয়েছে যা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে জমিতে রোপণ করা হবে এবং কম্বাইম হারভেস্ট মেশিনের মাধ্যমে জমির ধান কর্তন করা হবে।প্রথম পর্যায়ে এ কর্মসূচীর আওতায় জমিতে বীজ,সার,চারা রোপন এবং ধান কর্তনের সম্পূর্ণ ব্যায় সরকারি ভাবে বহন করা হবে। জমিতে সার প্রয়োগ,আগাছা ও পরিচর্যা কৃষকরা দলিয় ভাবে করবে,এর মাধ্যমে উপসি জাতের ধানের ফলন বারবে এবং কৃষকদের মাঝে দলিয় ভাবে কাজ করার মাধ্যমে সমবায় ভিত্তিক কার্যক্রম গড়ে তোলাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে এ বছর মোট ১১২৪১ হেঃ জমিতে বিভিন্ন জাতের  ধান চাষ হয়েছে।উন্নত কৃষি প্রযুক্তির ব্যাবহারে কৃষকদের শ্রম ও সময়ের সঠিক ব্যাবহারের  মাধ্যমে আগামীতে জেলায় কৃষি কাজে ব্যাবহৃত জমির পরিমান আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও খবর

Sponsered content