রংপুর

সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের অসদাচরন, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে তদন্ত

  প্রতিনিধি ২৯ আগস্ট ২০২৩ , ৬:০৯:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরনের অভিযোগে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে তদন্ত হয়েছে। সোমবার (২৮ আগষ্ট) রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি দিনভর উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে অভিযোগের বিষয়ে উভয় পক্ষের লিখিত বক্তব্য গ্রহন করেন।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উলিপুর উপজেলায় কর্মরত ২০জন সরকারি কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) কে আহবায়ক, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা) কে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরেজমিন তদন্ত পূর্বক মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন। ওই তদন্ত কমিটি উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয় পক্ষের লিখিত বক্তব্য গ্রহন করেন।


উল্লেখ্য, গত ২২ মে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন ‘এ উপজেলায় আজকের পর থেকে কিভাবে চাকরি করেন তা দেখবো’। এছাড়া চেয়ারম্যান প্রায় সময় সরকারি কর্মকর্তাদের লাথি মেরে ফেলে দেয়াসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে থাকেন এবং তিনি প্রভাব খাটিয়ে সমন্বয় সভা, অন্যান্য সভা ও দাপ্তরির কার্যক্রমে আইনানুগ প্রক্রিয়ার বাহিরে গিয়ে সুপারিশ করে থাকেন। তা পালন না করলে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করেন। এছাড়া অফিসে তার লোকজন পাঠিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ চরম অপমান করেন।

এ ঘটনায় উপজেলায় কর্মরত ২০ জন কর্মকর্তা নিরাপত্তাহীনতা ও অপমান থেকে রক্ষা পেতে গত ৩১ মে উপজেলা নির্বাহী কমকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি (ইউএনও) অভিযোগটি ৭জুন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠান। পরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০ জুলাই স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ড. মাসুরা বেগম স্বাক্ষরিত এক পত্রে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে ৭ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে পত্র প্রেরণ করেন। পরে চেয়ারম্যান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই পত্রের জবাব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দপ্তরে দাখিল করেন।


এ ঘটনার পর সোমবার (২৮ আগষ্ট) প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম সরেজমিন তদন্তে আসেন। তদন্ত টিম অভিযোগকারী সরকারি ২০ কর্মকর্তার প্রত্যেকের কাছে পৃথক পৃথক লিখিত বক্তব্য গ্রহন করেন। এরপর পৃথক ভাবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বক্তব্য লিখিতভাবে গ্রহন করেন।


উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি কর্মকর্তাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওই দিনের সমন্বয় সভায় টিআর,কাবিখা প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও নিয়মিত অফিস না করার বিষয়ে পিআইও সাহেবের কাছে জবাব চেয়েছিলাম। এছাড়া মাধ্যমিক অফিসার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও কমিটি গঠনের ব্যাপারে টাকা পয়সা নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। এই বিষয় গুলোর প্রতিবাদ করার সময় হয়তো বা একটু উচ্চস্বরে কথা বলেছি। এর বেশি কিছু না। আমি তাদের গালিও দেইনি, মারতেও যাইনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোভন রাংসা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদন্ত টিমের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি তদন্ত কমিটির কেউ না। এ বিষয়ে আমার কিছু বলা সম্ভব না।


তদন্ত কমিটির সদস্য ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মিনহাজুল ইসলাম জানান, অভিযোগকারী সকল কর্মকর্তাদের লিখিত বক্তব্য পৃথক পৃথক ভাবে নেয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঘটনার দিনের (২২ মে) সমন্বয় সভায় উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যানদের বক্তব্য পৃথক ভাবে নেয়া হয়েছে। তদন্তে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে এ বিষয় কোন মন্তব্য করা যাবে না।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by